‘স্মার্ট’ ঢাকার প্রতিশ্রুতি আনিসুলের

নির্বাচিত হলে রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2015, 07:43 AM
Updated : 11 April 2015, 10:54 AM

শনিবার সকালে রাজধানীর নিকুঞ্জে ‘লোটাস-কামাল টাওয়ার’-এ নির্বাচনী কার্যালয়ে ‘পরিচ্ছন্ন-সবুজ-আলোকিত-মানবিক’ স্লোগানে ইশতেহার ঘোষণা করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল।

ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী রাখতে ছয়টি মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

এগুলো হলো- পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ঢাকা; নিরাপদ-স্বাস্থ্যকর ঢাকা; ‘সচল’ ঢাকা; ‘মানবিক উন্নয়নের’ ঢাকা; ‘স্মার্ট ও ডিজিটাল’ ঢাকা এবং অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা।

টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে সিটি নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকা আনিসুল সিটি করপোরেশনের কাজে সমন্বয়ের ঘাটতির জন্য ‘দক্ষ’ সমন্বয়কের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন।  

তিনি বলেন, “আইনে ২৮ ধরনের কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও মেয়রের আইনি কর্তৃত্বের অভাব আছে। অন্যদিকে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে মেয়রকে সরকারের ৫৬টি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়। সিটি করপোরেশন এবং এসব সংস্থা একসাথে কাজ করলেই কেবল সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব। দক্ষ সমন্বয়কের অভাব আছে এসব সংস্থাগুলোর মধ্যে।

“ঢাকার নাগরিকরা আমাকে নির্বাচিত করলে সংস্থাগুলোর মধ্যে সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

মেয়র হলে নগরভবনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখারও ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক।

“আমি নগরীর পিতা নই, নাগরিকদের বন্ধু হতে চাই।”

ইশতেহারে আনিসুল হক বলেন, “শহর বিনির্মাণে আমাদের দর্শন হচ্ছে ধনী-গরীব সকলের জন্য মানবিক এক ঢাকা, যেখানে নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে সবকিছুর উপরে, মানুষের অধিকার থাকবে সুরক্ষিত।

“ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শহর বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করলে অবশ্যই উত্তর ঢাকায় বহু দৃশ্যমাণ পরিবর্তন আসবে, যার নেতৃত্বে থাকবে জনগণ, আমি তাদের সাথে থাকতে চাই।”

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি

পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ঢাকা; নিরাপদ-স্বাস্থ্যকর ঢাকা; ‘সচল’ ঢাকা; ‘মানবিক উন্নয়নের’ ঢাকা; ‘স্মার্ট ও ডিজিটাল’ ঢাকা এবং অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা- এ সাতটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আনিসুল হক।

সাত বিষয়ে আওতায় বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীদের  শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি।

তিনি বলেন, ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ-সার সম্পদ সৃষ্টি; প্রতি ওয়ার্ড, রাস্তা ও বাড়িভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন; জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং লেক পার্ক মাঠ পরিষ্কার ও উন্নয়ন করে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ফরমালিনমুক্ত বাজার ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিত, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ, নারীসহ সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপন, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের নারী পুরুষ ও বস্তিবাসী মানুষের সেবার আওতা বাড়ানো, সংক্রামক ব্যধির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান, নিয়মিত মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান, স্কুলে শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং নগরীর জল-জমি-বায়ু ও শব্দ দূষন ও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গণপরিবহন ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার, নারীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ বাস, যথাস্থানে বাস স্টপেজ ও রেল সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপেসওয়ে বাস্তবায়নে তৎপরতা চালানো, সড়ক সংস্কার ও ফুটপাত প্রশস্ত করে গাছ লাগানো, পথচারীদের জন্য জেব্রা ক্রসিং, পথচারী সংকেত, কমিউনিটি ট্রাফিক প্রচলন, প্রতিটি জোনে সুনির্দিষ্ট পার্কিং কাম কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং নগরের সাইকেল ব্যবহার উৎসাহিত করা ও সাইকেল লেন তৈরি করা।

প্রতিটি ওয়ার্ডে ডে-কেয়ার সেন্টার কাম প্রি স্কুল নির্মাণ এবং ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল প্রতিষ্ঠা, গার্মেন্টস, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতের শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প খরচের আবাসনের ব্যবস্থা, যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিএনসিসির এলাকায় একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ স্থাপন, অন্যান্য ধর্মালম্বীদের উপসনালয় নির্মাণে সহায়তা করা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কবরস্থান প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন।

পিপিপির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পাবলিক স্থানে ফ্রি ওয়াই-ফাই চালু ও ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, সিসিটিভির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ডিজিটাল বুলেটিন বোর্ড স্থাপন, নাগরিক সমস্যা জানানো, সেবা সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু, নাগরিক সেবা, অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু, করপোরেশনের সব ধরনের সেবাকে ডিজিটাল করা, ই-সেবা চালু করা, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য বিশেষ সেবা সম্বলিত সিটি কার্ড প্রচলন।

আইনি দুর্বলতা দূর করে সিটি করপোরেশনকে সেবা প্রদানে ও পরিকল্পনায় শক্তিশালী ও জনসম্পৃক্ত করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, ডিএনসিসির নিজস্ব মনিটরিং ব্যবস্থা করা; ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা ও কেন্দ্রীয়ভাবে নগর সভা করা, নগর উন্নয়নে উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন, নাগরিক তথ্য কেন্দ্র স্থাপন এবং প্রতি বছর প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে দুজনকে ‘সুনাগরিক’ সিটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া।

ইশতেহার ঘোষণার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হবে। পাঁচ বছর অনেক লম্বা সময়। দৃষ্টি যদি পরিষ্কার হয়, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে টাকা খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি সিটি গভর্ননেন্সের প্রয়োজন পড়ে, সেটার প্রস্তাবও পরবর্তীতে ভেবে দেখা হবে।”

ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মান্নান কচি, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, তারানা হালিম, আসলামুল হক, আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহার ঘোষণার পর বিকালে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভোট চাইতে যান আনিসুল হক।