কট্টরপন্থী ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তথাকথিত ইসলাম অবমাননাকারী ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আইন চেয়ে বিক্ষোভ করেছে সরকার সমর্থক একদল ইসলামী নেতা।
Published : 04 Apr 2015, 09:47 PM
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে আওয়ামী ওলামা লীগ নামের ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইসব মৌলবাদী নেতা জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ মুসলমান দাবি করে তাদের জন্য সেই অনুপাতে সরকারি চাকরির বরাদ্দ চেয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
ওলামা লীগের উত্থাপিত দাবির মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল ও বাল্যবিবাহবিরোধী সব আইন রদ করার কথাও রয়েছে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার এক মানববন্ধন করে এসব দাবি জানায় তারা।
ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী সংগঠন না হলেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দলীয় প্রায় সব অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওলামা লীগ আয়োজিত হরতাল- অবরোধ বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সরকারের মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রধান অতিথি হয়ে অংশ নিতে দেখা যায়।
সংগঠনটির দলীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিচয় দিলেও সরেজমিনে কোথাও তাদের অফিস কক্ষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওলামা লীগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “আওয়ামী লীগের অনুমোদন ছাড়া কোন সংগঠনের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।”
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, কৃষক লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগ। এছাড়া ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ।
মানববন্ধনে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, “স্বঘোষিত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগাররা ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে ইস্যু তুলে দিচ্ছে। এরা ইসলাম ধর্ম অবমাননা করে আসছে, যা তসলিমা নাসরীন, সালমান রুশদী, দাউদ হায়দারকেও হার মানিয়েছে। তাই মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তার নামে ইসলাম অবমাননাকারী এসব নাস্তিকদের মৃত্যুদণ্ডের আইন করতে হবে।”
দাবিগুলোর অধিকাংশই হেফাজতে ইসলামীর ১৩ দফার অনুরূপ।
মানববন্ধনে প্রচলিত শিক্ষানীতি বতিলের দাবি করে মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, “শিক্ষানীতি ২০১০ দ্বারা কৌশলে ইসলাম শিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শ্রেণি পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষার নাম দেওয়া হয়েছে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা। বোঝানো হয়েছে ইসলাম ধর্মের মধ্যে নৈতিকতা নেই, তাই আলাদাভাবে নৈতিকতা শেখাতে হবে। এই শিক্ষানীতিতে একাদশ শ্রেণির মানবিক, ব্যবসা ও বিজ্ঞান শাখায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে, এটা ইসলাম শিক্ষা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র ও দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশকে ধর্মহীন করার আরেকটি কূটকৌশল।”
মানববন্ধনে প্রচলিত শিক্ষানীতিতে প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষা নামে ‘শিক্ষার্থীদের ব্যাভিচারিতা ও অশ্লীলতার দিকে উসকে দেওয়া হচ্ছে’ মন্তব্য করে দলটির একজন নেতা বলেন, “চারুকলার নামে সঙ্গীত, নাটক, নৃত্যানুষ্ঠান, নৃত্য একাডেমি করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বেহায়াপনায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”
বর্তমান পাঠ্য পুস্তকে ইসলামবিরোধী হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের লেখা প্রাধান্য পেয়েছে বলে মন্তব্য করে লিখিত বক্তব্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান বলেন, “প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখার পরিমাণ ৭১ ভাগ, যার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয় ভুলিয়ে হিন্দুধর্মে প্রবেশ করানো হচ্ছে।”
আবুল হাসান বলেন, “বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বা ১৮ নির্দিষ্ট করা করা যাবে না, সুন্নতি বাল্য বিবাহবিরোধী সব আইন প্রত্যাহার করতে হবে।”
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা দলগুলো, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, জাতীয় কুরআন শিক্ষা মিশন, বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ ঐক্যজোট, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা পরিষদ, কেন্দ্রীয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, বাংলাদেশ হাক্কানি আলেম সমাজ, জাতীয় ওলামা পরিষদ, বাংলাদেশ এতিমখানা কল্যাণ সমিতি, ইমাম মোয়াজ্জিন কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুন্নী ছাত্র ঐক্য, আমরা ঢাকাবাসী ও বঙ্গবন্ধু ওলামা পরিষদ।