বিআরটিএ কর্মকর্তার বাসায় ঢুকে হামলায় স্ত্রী নিহত

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তার জন্মদিনে কেক, মিষ্টি ও ফুল নিয়ে তার বাসায় এসে হামলা চালিয়েছেন পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি, যাতে ওই কর্মকর্তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2015, 08:23 AM
Updated : 20 April 2017, 10:02 AM

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সোমবার রাতের এ ঘটনায় বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের উপপরিচালক সীতাংশু শেখর বিশ্বাস এবং তার দুই মেয়েও আহত হয়েছেন।

হামলায় আঘাত পাওয়ার পর আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন তার স্ত্রী আদাবরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডল (৩৫)।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ৩/১২ নম্বর বাড়িতে সীতাংশুর ফ্ল্যাটে এই হামলা হয়।

পাঁচতলা এই ভবনের দোতালার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই মেয়ে শ্রুতি (১৫) ও অদ্বিতীয়াকে (০৮) নিয়ে থাকেন সীতাংশু।

ওসি আজিজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সীতাংশুর জন্মদিন ছিল সোমবার, পরিচিত এক যুবক কেক, মিষ্টি ও ফুল নিয়ে তাদের বাসায় আসেন। কেক টেবিলে সাজিয়ে মোমবাতিও জ্বালানো হয়। এরপরে হঠাৎ করেই সঙ্গে নিয়ে আসা হাতুড়ি দিয়ে সীতাংশুর মাথায় আঘাত করে ওই যুবক।”

আহতদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “সীতাংশুকে আঘাতের পর তার স্ত্রী ও দুই সন্তান এগিয়ে এলে হাতুড়ি দিয়ে তাদের ওপরও হামলা চালায় ওই যুবক। এরপরেই সে পালিয়ে যায়।

“হামলার মধ্যে কেকের উপর জ্বলতে থাকা মোমবাতির উপর পড়ে যান কৃষ্ণা। এতে তার কাপড়ে আগুন ধরে যায়। এরপর তিনি আগুন থেকে বাঁচতে পুরো ঘরে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এক সময় সোফায় বসার চেষ্টা করলে তাতেও আগুন ধরে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

“এরই মধ্যে সীতাংশু ও তার দুই মেয়ে দৌড়ে পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল চাপ দেয় এবং ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকে।”

ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা প্রকৌশলী সাবের আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিৎকার শুনে তিনি দরজা খুলে দেখেন সীতাংশু ও তার দুই মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তার বাসার দরজার সামনে। তাদের তাড়াতাড়ি বাসার ভেতরে নিয়ে যান।

“এসময় এক মেয়ে তার মাকে বাঁচানোর অনুরোধ করলে তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় পুরো ঘর আচ্ছন্ন। পরে আমার বাসা থেকে পানি এনে নেভানোর চেষ্টা করা হয় এবং পর্দার পাশে দগ্ধ ও রক্তাক্ত অবস্থায় বৌদিকে (কৃষ্ণা) পাওয়া যায়।”

সাবের বলেন, সীতাংশু ওই অবস্থায় এই ঘটনার জন্য জহিরুল নামে একজনকে দায়ী করছিলেন।

“তিনি বলছিলেন, ‘জহিরুল এই ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে।”

ওসি আজিজুল বলেন, “সীতাংশু ও তার দুই মেয়ে এবং পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে হাজী আহমেদ সিকিউরিটিজ নামের একটি ব্রোকার হাউজের ম্যানেজার জহিরুল একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

রাতেই দগ্ধ ও মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া কৃষ্ণাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর সীতাংশু ও তার দুই মেয়েকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার সকালে কৃষ্ণা মারা যান বলে জানান ওসি।

তিনি বলেন, কী কারণে এই হামলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। জহিরুলকে গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।