ধর্মোন্মাদদের বিচার চাইতে এখন মিনতি জানাতে হয়: বন্যা

মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তের তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা, যিনি নিজেও সেদিন হামলায় আহত হন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2015, 06:15 PM
Updated : 27 March 2015, 06:41 PM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লেখক-হত্যাকারীদের বিচার থেকে ‘অব্যাহতি দেওয়ার সংস্কৃতি’ বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বন্যা লিখেছেন, “ছাব্বিশে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে এই লেখা লিখছি। এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম একটা মূলনীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করার কথা ছিল সকল মানুষের বাকস্বাধীনতা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা উপলব্ধি করছি যে, আজকে সেই দেশেই ধর্মোন্মাদদের অরাজক কাজকর্মের বিচার চাইবার জন্য আমাদের কাকুতি-মিনতি করতে হচ্ছে।”

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের চাপাতির আঘাতে বন্যার একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যিনি নিজেও একজন ব্লগার। 

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসলামী জঙ্গিবাদীদের দায়ী করে আসছেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

‘অভিজিৎ হত্যার ঠিক এক মাস পর’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে বন্যাও লিখেছেন, “অভিজিৎ বিজ্ঞান এবং মানবাধিকার বিষয়ে লেখালেখি করত, কঠোর সমালোচনা করত ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে এবং প্রতিষ্ঠা করেছিল মুক্তচিন্তকদের জন্য বাংলায় সর্বপ্রথম একটা অনলাইন প্লাটফর্ম-– ‘মুক্তমনা’। এই সবের জন্য, ধর্মীয় মৌলবাদীরা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।”

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎ কাজ করছিলেন প্রকৌশলী হিসাবে। এবারের বইমেলাতেও তার দুটি বই প্রকাশিত হয়। দেশে এসে স্বামীকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই ফিরে গেছেন বন্যা।   

তিনি লিখেছেন- “অভিজিৎ হত্যার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ‘আনসার বাংলা ৭’ নামের একটি ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার কৃতিত্ব দাবি করে। এত কিছুর পরেও, এক মাস পরে এসে একজন মাত্র সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া এই তদন্তের আর কোনো অগ্রগতি নেই।”

অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেবল উগ্রপন্থী ব্লগার ফারাবী শফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি ফেইসবুকে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।

এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যাকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অভিজিতের বাবা। 

নিবন্ধে বন্যা বলেন, “যুক্তিবাদী লেখকদের ওপর এ রকম হামলা বাংলাদেশে এই প্রথম নয়। এর আগেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে। বিচার না হবার কারণে সন্ত্রাসীরা নিজেদের ভেবেছে দুর্জেয়, আর হতাশায় মুষড়ে পড়েছে সাধারণ জনগণ।

“আমরা দাবি জানাই, বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের শিকড়সহ উপড়ে ফেলুক; লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না এনে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করুক।”

সর্বশেষ গত রোববার গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিজিৎ রায়ের খুনি কারা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য গোয়েন্দারা এখনো উদ্ধার করতে পারেননি।

তিনি বলেন, “অভিজিৎ রায় হত্যার সময় অনেক মানুষ সেখানে ছিল। তারপরও কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছে না, হত্যাকাণ্ডে কতজন অংশ নিয়েছিল। তারা দেখতে কেমন, তাও কেউ পুলিশকে জানাতে পারেনি।”

তদন্তের এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বন্যা লিখেছেন, “অভিজিতের স্ত্রী, তার সহযাত্রী লেখক এবং একজন মুক্তমনা হিসেবে, আমি আবারও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাচ্ছি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য।”