তদন্ত নিয়ে হতাশ অভিজিতের বাবা

বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর বিষয়ে আবারও নিজের সন্দেহের কথা প্রকাশ করে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন যুক্তিবাদি এই লেখকের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2015, 10:49 AM
Updated : 20 March 2015, 02:41 PM

তিনি বলেছেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে শিবিরের কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতাসহ কয়েকটি বিষয়ে নিজের অনুসন্ধানের তথ্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু প্রায় এক মাস হতে চললেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে এক নাগরিক সমাবেশে নিজের হতাশার কথা তুলে ধরেন পদার্থবিদ অজয় রায়, যার দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতে আলোচিত হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে হামলায় নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ রায়, যিনি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ব্লগ মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা। এবারের মেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়।

অভিজিতের স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও ওই হামলায় আহত হন। এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। 

সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর অবস্থান এবং পরে বিজ্ঞান লেখকদের এক আড্ডায় তাদের যোগ দেওয়া নিয়ে নিজের অনুসন্ধানের তথ্য নাগরিক সমাবেশে তুলে ধরেন অধ্যাপক অজয় রায়।

বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নানই সেদিন অভিজিৎ-বন্যাকে ওই আড্ডায় ডেকে নিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

“ফারসীম মান্নানের গতিবিধি ও তার চরিত্র আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হচ্ছে। যিনি ফেইসবুকের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। যাতে ১১ জন আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে অনাহূত ৪/৫ জনের উপস্থিতি ছিল।”

‘অনাহূত’ সেই ব্যক্তিরা শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উল্লেখ করে অভিজিতের বাবা বলেন, “তাদেরকে বুয়েটের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই শিক্ষকই ডেকে আলোচনাস্থলে এনেছে বলে তারা বলেছে।”

অজয় রায় বলেন, অভিজিতের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের অনুষ্ঠানে সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তার ছেলে ও পুত্রবধূ। পরে ছায়াবিথী ও অবসর প্রকাশনীর স্টলের মাঝে ত্রিপল বিছানো উন্মুক্ত স্থানে সেই আড্ডায় বসেন তারা।

“ওখানে রাত ৮টা পর্যন্ত আলোচনা হয়, যেটা ফেইসবুকের মাধ্যমে ফারসীম মান্নান আয়োজন করে। জিরো টু ইনফিনিটি ও পাই নামে দুটো সংগঠনের লোকজনও উপস্থিত ছিল সেখানে। তাদের সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”

জিরো টু ইনফিনিটির সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সেই ‘অনাহূত’ লোকদের গালাগাল করেন বলেও উল্লেখ করেন অজয় রায়।

“কারা আমন্ত্রণ করেছে  জানতে চাইলে অনাহূতরা দাবি করে, স্যার [ফারসীম মান্নান] তাদের ডেকেছেন। এগুলো অভিজিৎ জানত না। অভিজিতকে দেখে তারা সেখান থেকে উঠে চলে যায়।”

ওই আলোচনার পর রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে অভিজিতকে হত্যা করা হয়।

অজয় রায় বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে’ অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া এসব তথ্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকেও জানিয়েছেন।

“সিআইডি, গোয়েন্দা বিভাগ ও ডিবিকে সবার নামসহ সার্বিক বিষয়টি জানানো হয়েছে। এরপর অনেকদিন, এক মাসের মতো সময় পার হতে যাচ্ছে; দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না।”

এ অনুসন্ধানে যুক্ত এফবিআই সদস্যদের সব বিষয় জানিয়ে সহযোগিতা করতেও গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

“উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এফবিআই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বের করতে পারবে আশা করি। সেই সঙ্গে তাদের মদদদাতা মৌলবাদী গোষ্ঠীর মুখোশও উন্মোচিত হবে।”

এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীকে নিয়ে সন্দেহ আর তদন্ত নিয়ে অসন্তোষের কথা বলেছিলেন অজয় রায়।

ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর তার প্রতিক্রিয়ায় ফারসীম মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, ওই আড্ডায় ‘অপরিচিত’ কেউ ছিলেন না।

অভিজিতের এমন মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাগরিক সমাবেশে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তার বাবা, যিনি ছেলেকে ডাকতেন ‘গুল্লু’ নামে। 

তিনি বলেন, “আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। পিতার আগে পুত্রের মৃত্যু ঘটেছে। তার লাশ বহন করা আমার কাছে অত্যন্ত কঠিন। তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই নাগরিক সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নূহ উল আলম লেনিন, খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, ডা. সারোয়ার আলী ও পঙ্কজ ভট্টচার্যসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।