সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে শিবিরের আস্তানায় অস্ত্র গুলি বোমা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পর এবার সীতাকুণ্ড উপজেলার দুর্গম পাহাড় থেকে অস্ত্র, গুলি ও বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2015, 02:52 AM
Updated : 8 March 2015, 10:30 AM

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসবি) নাইমুল হাসান জানান, ইয়াকুব নগরের দুর্গম পাহাড়ে শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র, গুলি ও বোমা উদ্ধার হয়। 

বাঁশখালীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা বলা হলেও সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের তিনটি আস্তানা থেকে এসব পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

অবরোধ-হরতালে মহাসড়কে নাশকতার জন্য ওই এলাকায় শিবির কর্মীরা এসব আস্তানা তৈরি করে বলে নাইমুল হাসান জানান। 

ওই আস্তানা থেকে ৭০টি পেট্রোল বোমা, ৫০টি হাতবোমা, ১২টি ধারালো অস্ত্র, চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৪টি গুলি ও তিনটি রকেট ফ্লেয়ার পাওয়া যায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া সীতাকুণ্ড মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, “শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিবিরের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। এসব পহাড়ে খোদাই করে ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’ নাম লেখা পাওয়া গেছে।” 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, সীতাকুণ্ড সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ইয়াকুব নগর এলাকা ও সেখান থেকে আরও ৩/৪ কিলোমিটার ভেতরে দুর্গম পাহাড়ে এসব আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়।

পাহাড়গুলো চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে তিনশ গজ উত্তরে ও কয়েকশ ফুট উঁচু বলে জানান তিনি।

গত জাতীয় নির্বাচনের আগে মহাসড়কে নাশকতার সময় এসব আস্তানা তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখানে নিয়মিত কর্মীজমায়েতের ‘তথ্য-প্রমাণ’ পুলিশ পেয়েছে বলে এএসপি সাইফুল জানান।

“তিনটি পাহাড়ের তিনিটি আস্তানায় এসব অস্ত্র ও বোমা পাওয়া যায়। পাহাড়ে তাবু বানিয়ে আস্তানা তৈরি করা হয়েছিল।”

জনশূন্য এসব পাহাড়ের রাস্তা খুবই সরু ও দুর্গম হওয়ায় সেখানে আগে কখনও পুলিশ অভিযান চালাতে পারেনি বলে জানান তিনি।

“ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা এসব পাহাড়ে বোমা তৈরি করত। মহাসড়কে নাশকতার কাজে সেগুলো ব্যবহার করা হতো।”

সাইফুল জানান, পাহাড়ের এই এলাকাগুলোর সঙ্গে হাটহাজারি ও ফটিকছড়ি উপজেলার সংযোগ রয়েছে। সেসব এলাকা থেকে শিবিরকর্মীরা এসে পাহাড়ে আশ্রয় নিত এবং মহাসড়কে নাশকতা চালিয়ে আবার পাহাড়ি পথ ধরে চলে যেত।

পাহাড়গুলোতে থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থাই ছিল জানিয়ে এএসপি সাইফুল বলেন, “সন্ধ্যায় পাহাড়গুলোতে খাবার ও লেপ তোষক নিয়ে যাওয়া হতো। স্থানীয় লোকজন যাতে পুলিশকে না জানায়, সেজন্য ভয়ভীতিও দেখানো হতো।”

প্রতিদিন সেখানে ৩০ থেকে ৪০জন লোক থাকতো বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

তবে আটক শিবিরকর্মীদের পরিচয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

এএসপি সাইফুল বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তথ্য পেলে আরও অভিযান চালানো হবে।”

বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধের মধ্যে এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের হালিশহরের একটি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, হাতবোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে র‌্যাব।

ওই বাসা থেকেও শিবিরের গঠনতন্ত্র ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কাগজপত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দুর্গম পাহাড় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

যেখানে নিয়মিত জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে লাগাতার অবরোধের মধ্যেই ফাঁকে ফাঁকে হরতাল করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

অবরোধে প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

নাশকতা ও সহিংসতায় এই সময়ে নিহত হয়েছে শতাধিক লোক।

অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামেই হাতবোমা ছুড়তে গিয়ে নিজের হাতে বিস্ফোরণ ঘটলে নিহত হয়েছেন এক শিবিরকর্মী।

২০১৩ সালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের সাজার রায় ঘোষণা এবং পরের বছরের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সীতাকুণ্ডে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারীদের জন্য সে সময় সীতাকুণ্ড উপজেলা হয়ে ওঠে আতঙ্কের জনপদ।