পাটুরিয়ায় ৬৯ লাশ উদ্ধার, অভিযান সমাপ্ত

পাটুরিয়ায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়ার ২০ ঘণ্টা পর পদ্মা পারাপারের লঞ্চ এমভি মোস্তফাকে টেনে তুলে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন। 

নিজস্ব প্রতিবেদকও মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2015, 02:50 AM
Updated : 23 Feb 2015, 01:45 PM

জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানিয়েছেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা মোট ৬৯ জনের মৃতদেহ পেয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। 

তিনি বলেন, “আমরা লঞ্চ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করছি। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও ডুবুরিরা ট্রলার নিয়ে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে যাবেন। আর কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায় কি-না দেখবেন।”

উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে শনাক্ত হওয়া ৫৭টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যে ১২টি লাশ শনাক্ত করা যায়নি সেগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“আমরা অনুরোধ করেছি, যাতে সেখানে লাশগুলো অন্তত দুইদিন রাখা হয়। তাহলে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করার সুযোগ পাবেন।”

রোববার দুপুর ১২টার দিকে পাটুরিয়ার ঘাট থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় মাঝনদীতে দুর্ঘটনায় পড়ে এমভি মোস্তফা-৩ নামের লঞ্চটি।

কমফোর্ট লাইন ও রাজধানী এক্সপ্রেস নামে দুটি বাসের দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে যাচ্ছিল। 

নগরবাড়ী থেকে ঢাকাগামী কার্গো জাহাজ এমভি নার্গিস-১ লঞ্চটির মাঝামাঝি অংশে ধাক্কা দিলে ডান দিকে কাত হয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে সেটি ডুবে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

লঞ্চডুবির পরপরই আশেপাশের লোকজন নৌকা ও ট্রলার নিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে। এ সময় বেশ কিছু যাত্রী সাঁতরে অন্য লঞ্চ ও ট্রলারে উঠতে সক্ষম হন।

বিআইডিব্লিউএর টাগবোটের মাধ্যমে লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করে রোববার বিকালেই দড়ি দিয়ে সেটি বেঁধে রাখা হয়। মাওয়া থেকে এসে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম রাত সোয়া ১১টার দিকে অভিযানে যোগ দেয় এবং ভোর সাড়ে ৪টার দিকে লঞ্চটিকে টেনে ঘাটের কাছে নিয়ে আসা হয়।

রাতভর উদ্ধার অভিযানের পর সোমবার সকাল পৌনে ৯টার দিনে লঞ্চটিকে টেনে সোজা করা হয়। এরপর ভেতরে পাওয়া যায় আরও কয়েকটি লাশ।  

এরই মধ্যে পাটুরিয়া ঘাটে বসানো নিয়ন্ত্রণ কক্ষে লাশ সনাক্ত ও হস্তান্তর করার কাজ চলতে থাকে।

জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস সারা রাত সেখানে থেকে পুরো কাজের তদারক করেন। নিহতদের লাশ সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।  

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে সকাল ১০টায় বৈঠক করার পর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জেলা প্রশাসক।

এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেবল একজন তার স্বজনের নিখোঁজ থাকার কথা আমাদের জানিয়েছেন। নতুন করে কারো নিখোঁজ থাকার অভিযোগ আমরা পাইনি।” 

তবে ওই লঞ্চে কতোজন আরোহী ছিলেন তার সঠিক হিসাব জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন।

রাশিদা ফেরদৌস বলেন, “যাত্রী কতো ছিল তা বলা সম্ভব না। লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা ছিল ১৪০, সেই হিসাবে দেড়শ’র মতো যাত্রী থাকতে পারে।”

ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী বহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চালকদের অদক্ষতা আর প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটা কখনোই কাম্য নয়।... “তারা সতর্ক ছিল না। দুই চালকই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানও রোববার একই ধরনের কথা বলেছিলেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, কার্গোটি আসতে দেখেও লঞ্চের মাস্টার গতি বাড়িয়ে পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর কার্গো মাস্টারও সতর্ক হননি।    

নৌমন্ত্রী নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।

এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কার্গো জাহাজ এমভি নার্গিস-১ এর চালকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।