লঞ্চডুবির পর পদ্মায় ৪৩ লাশ

পাটুরিয়ায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিমানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2015, 06:37 AM
Updated : 22 Feb 2015, 10:28 PM

মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, রোববার দুপুর ১২টার দিকে পাটুরিয়ার ঘাট থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পরপরই মাঝনদীতে দুর্ঘটনায় পড়ে এমএল মোস্তফা-৩ নামের লঞ্চটি।

এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কার্গো জাহাজ এমভি নার্গিস-১ এর চালকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।

জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২২টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

“নিহতদের সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এদের ১৮ জন পুরুষ, ১৩ জন নারী ও ১২টি শিশু।”

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা ঘাটের বন্দর কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে।

ঠিক কতজন যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পুলিশ তা জানাতে না পারলেও কমফোর্ট লাইন ও রাজধানী এক্সপ্রেস নামে দুটি বাসের শতাধিক আরোহী নিয়ে লঞ্চটি পাটুরিয়া ছেড়েছিল বলে ঘাটের সুপারভাইজার জুয়েল রানা জানিয়েছেন।

নগরবাড়ী থেকে ঢাকাগামী একটি কার্গো জাহাজ লঞ্চের মাঝামাঝি অংশে ধাক্কা দিলে ডান দিকে কাত হয়ে সেটি ডুবে যায়।

লঞ্চডুবির পরপরই আশেপাশের লোকজন নৌকা ও ট্রলার নিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে। এ সময় বেশ কিছু যাত্রী সাঁতরে অন্য লঞ্চ ও ট্রলারে উঠতে সক্ষম হন।

গোপালগঞ্জের কমফোর্ট লাইনের সুপারভাইজার সাখাওয়াত হোসেন জানান, সকাল ৯টার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে ৪৩ জন যাত্রী নিয়ে তিনি গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ থেকে যাত্রীদের উদ্ধারের পর ৩৩ জনকে নিয়ে অন্য একটি বাসে করে তিনি বিকাল ৫টায় গোপালগঞ্জে পৌঁছান।

বেঁচে যাওয়া লঞ্চযাত্রী স্বপ্না বেগম (২৫) বলেন, “সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। বেঁচে ফিরতে পারব বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না।”

গোপালগঞ্জ কমফোর্ট লাইনের ম্যানেজার হামিদুর রহমান টিটো বলেন, “নিখোঁজদের জন্য আমরা নদীর তীর, শিবালয় ও মানিকগঞ্জ হাসাপাতালে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।”

রাজধানী এক্সপ্রেসের কতজন যাত্রী ওই লঞ্চে ছিলেন এবং তাদের মধ্যে কতজন এখনো নিখোঁজ তা জানা যায়নি।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা জানান, বিআইডব্লিউটিসির একটি টাগবোট ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করে টেনে তোলার চেষ্টা করছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জানান, “নদীতে ২০ ফুট পানির নিচে এমএল মোস্তফার অবস্থান সনাক্ত করা হয়েছে। লঞ্চটির ওজন প্রায় ৫০ টন।”

উদ্ধার কাজের তদারক করতে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকেও প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস, পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে রয়েছেন। পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে তাদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে ঘটনাস্থলে একটি মেডিকেল টিম রয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে নৌ-মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানিয়েছেন।

তবে নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুর রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্থায়ী তদন্ত কমিটিও বিষয়টি তদন্ত করবে।

মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন শাহজাহানকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে এই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।