রিভিউ আবেদন হবে: খন্দকার মাহবুব

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2015, 10:44 AM
Updated : 19 Feb 2015, 12:30 PM

আর রিভিউ আবেদন না করলেও সরকারকে দণ্ড কার্যকরের জন্য ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের এই  উপদেষ্টা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামনের মৃত্যুপরোয়ানা কারাগারে পাঠানোর পর এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “আমি ভাবতে পারি না, কীভাবে বক্তব্য দিলেন যে, ‘রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, তার মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফাঁসি দেয়া হবে’।”

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আসামিপক্ষ রায় পর্যালোচনার জন্য ১৫ দিন সময় পাবে। বুধবার এই দিন গণনা শুরু হয়েছে।তবে এর মধ্যেও সরকার তার প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে রাখতে পারে।

 “এই ১৫ দিন রাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে হবে বলে আপিল বিভাগ রিভিউর রায়ে বলেন নাই। ধরেন, কেউ যদি রিভিউ না করে, তাহলে কি রাষ্ট্র বসে থাকবে?”

এর প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মাহবুব বলেন, “এটা সম্পূর্ণ বেআইনি, খামখেয়ালী এবং আইন কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা। তা না হলে তারা সরকারকে এভাবে পরামর্শ দিতে পারত না।”

জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে তার রিভিউ আবেদনে প্রসঙ্গ টেনে কামারুজ্জামানের আইনজীবী প্রশ্ন রাখেন, “আপিল বিভাগ আমাদের রিভিউ শুনে রায় দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করা যাবে। তাহলে কি করে রিভিউয়ের ১৫ দিন সময় অতিক্রম হওয়ার আগে ফাঁসি কার্যকর হবে?”

তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আমরা রিভিউ করব।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার জানিয়েছিলেন,আগামী রোববারের মধ্যে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি তৈরি হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

ফাইল ছবি

খন্দকার মাহবুব বলেন, “রিভিউয়ের পর আদেশ অনুসারে সিদ্ধান্ত হবে যে কীভাবে তা কার্যকর হবে। সেখানে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে, নাকি যাবজ্জীবন হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই রিভিউ আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপিলের রায় কার্যকর হতে পারে না।”

তিনি বলেন, রিভিউ নিষ্পত্তির পর আসামিকে জিজ্ঞেস করতে হবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা। তিনি ক্ষমা চাইতে রাজি থাকলে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, সার্টিফাইড কপি পাওয়া বা আসামিকে মৃত্যু পরোয়ানার বিষয়টি জানানো- যেটি আগে হয়, সেদিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে হবে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

কামারুজ্জামানের অন্যতম আইনজীবী শিশির মো. মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটা আন ল’ফুল হবে। এটা সংশ্লিষ্টরাও বোঝেন বলে মনে করি।

“এরপরও রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তি হওয়ার আগে যদি তা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে ফেলেন তা হবে একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে.. আইন আপনার আমার জন্য যেমন, সবার জন্যই তাই। আমরা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।"

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলার আগে রিভিউ আবেদন করেছিলেন জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা।কিন্তু এ ধরনের মামলায় রিভিউ চলে কি না সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থেকেই যায়।পরে গতবছর ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হলে অস্পষ্টতা কাটে।

ওই রায়ে বলা হয়, আসামি ও রাষ্ট্র- দুপক্ষই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করতে পারবে। তবে রায়ের নির্ভরযোগ্যতায় ‘খাদ আছে’ বা ‘বিচার-বিভ্রাটের’ আশঙ্কা আছে বলে মনে করলেই আদালত তা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করবে।