নাশকতার বিচার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে: মন্ত্রী

চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতাকারীদের বিচারে ‘সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2015, 08:49 AM
Updated : 19 Feb 2015, 01:47 PM

২০০৯ সালে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী এই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।

হাই কোর্ট ‘হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য রোধে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “যে কর্মকাণ্ডগুলো এখন আমরা দেখছি, তা আমাদের দেশের প্রচলিত আইনেই অপরাধ। অপরাধগুলো যখন হচ্ছে তখন এন্টি টেরোরিজম স্পেশাল টাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

তবে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী এ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগ পর্যন্ত প্রচলিত আইনে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে এ ধরনের অপরাধীদের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রত্যেক দায়রা জজের কাছে পত্র দিয়েছি যে একজন অতিরিক্ত দায়রা জজ যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মামলার (নাশকতার ঘটনায়) বিচার করেন।”

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

মাঝে মাঝে ডাকা ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তবায়িত’ হরতাল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করে আদালত।

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানিয়েছিলেন, সরকার হরতাল-অবরোধের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন করার কথা ভাবছে।

তবে বিদ্যমান সন্ত্রাসবিরোধী আইনেই চলমান জ্বালাও পোড়াওয়ের বিচার সম্ভব বলে মত দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।

এরপর আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য দিলেন তাতে সরকার এখন নতুন আইন না করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অব্যবহৃত ধারাটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এ আইনেও সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।        

ফাইল ছবি

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে গত দেড় মাস ধরে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও যানবাহনে আগুন দেওয়া বা পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনা ঘটছে।

সরকারি হিসাবে গত ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পেট্রোল বোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন।

এ সময় ৬৬৪টি যানবাহন পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৪১০টি যানবাহন ভাংচুর করেছে অবরোধ সমর্থকরা।

চলমান নাশকতার ঘটনায় সারা দেশে অসংখ্য মামলা হলেও এর বেশিরভাগের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি বলে আনিসুল হক জানান।

তিনি বলেন, যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে সেগুলো আদালতে গেলেই বিচারকাজ শুরু হবে। প্রচলিত আইনে এসব ঘটনায় ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। কোনো কারণে তা না পারলে আরো কিছুদিন সময় বাড়ানো যাবে।

“যারা স্পেশাল অ্যাক্টে অপরাধ করেন তাদের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিধান আছে। এদের বিচার করতে হলে এন্টি টেরোরিজম স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করতে হবে।”

বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে প্রথম সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে আসার পর ওই অধ্যাদেশকে আইনের রূপ দেয়।

ওই সরকারের মেয়াদপূর্তির আগে ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনও করা হয়। তবে এর ২৬ ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে সন্ত্রাসী ও মদদদাতাদের বিচার করার উদ্যোগ এর আগে কখনো নেওয়া হয়নি।   

আইনে সন্ত্রাসী কাজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে যদি কেউ (ক) কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা ব্যক্তির কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে অথবা (খ) ‘ক’ এর উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য বস্তু, আগ্নেয়াস্ত্র বা অন্য কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে বা নিজে দখলে রাখে, ওই ব্যক্তি ‘সন্ত্রাসী কার্য’ সংঘটনের অপরাধ করছেন বলে গণ্য হবে।

এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডও দেওয়া যাবে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ ধরনের ঘটনায় উসকানিদাতার বিচারের বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে।

চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশের দায়ের হওয়া অসংখ্য মামলার মধ্যে অন্তত চারটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উসকানিদাতা হিসাবে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সংযমী হওয়ার আহ্বান জানালেও বিএনপি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে সচিবালয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (ইপি) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি জানান, হরতাল-অবরোধের মধ্যে দেশে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনাগুলো ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের অবহিত করা হয়েছে।

“মানবাধিকারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। মানবাধিকারের শিকড় যেন আরো শক্ত হয় সরকার সেই কাজ করছে। প্রতিনিধি দলকে আমরা সে বিষয়টিই জানিয়েছি।”