কামারুজ্জামানের রায়: এখন রিভিউ

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মো. কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারির উদ্যোগ নিতে পারলেও রিভিউ হলে থেমে যাবে পুরো প্রক্রিয়া।

সুলাইমান নিলয়ও শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2015, 10:55 AM
Updated : 8 March 2015, 11:18 AM

রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের মীমাংসা হওয়ার পর যে সিদ্ধান্ত হয়, তা কার্যকর হবে বলে আইনমন্ত্রীসহ আইনজীবীদের কথায় স্পষ্ট।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিলের প্রথম রায় হওয়ার পর থেকে রিভিউ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। পরে এই বিতর্কের মীমাংসা হয় আপিল বিভাগের রায়ে।

বুধবার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এখন তার সত্যায়িত অনুলিপি নিয়ে রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে করার সুযোগ পাবেন জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই রায় রিভিউয়ের আবেদন করতে চাইলে তা ১৫ দিনের মধ্যে করতে হবে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীকে।

বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই ১৫ দিন গণনা শুরু হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতিরা পূর্ণাঙ্গ রায় লিখে দেওয়ার পর এই ১৫ দিন গণনা শুরু হয়।

“যে পক্ষ রিভিউ করতে চায়, সেই পক্ষ সার্টিফাইড কপির জন্য দরখাস্ত করলে সময় গণনা বন্ধ হয়ে যাবে। যেদিন সার্টিফাইড কপি রেডি হবে, সেদিন থেকে আবার সময় গণনা শুরু হবে।”

আগামী রোববারের মধ্যে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি তৈরি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন আইনমন্ত্রী।

আপিল বিভাগ থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর রাতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেছে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায়।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত শুধু আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায়ই কার্যকর হয়েছে।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলার আগে রিভিউ আবেদন করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন যে কোনো আসামি। কাদের মোল্লা সেই সুযোগ নেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর মৃত্যু পরোয়ানা জারির জন্য তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

“এরপর ট্রাইব্যুনাল কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠাবে। সেটা ট্রাইব্যুনাল আজও করতে পারে, কালও করতে পারে। ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠালে সরকারের পক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন দিতে কোনো অসুবিধা নাই।”

তবে রিভিউ আবেদনে এই প্রক্রিয়া থমকে যাবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেলও জানান। 

“অবশ্য আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারবে। আর সে ক্ষেত্রে মৃত্যু পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে যাবে।”

রায় পর্যালোচনার আবেদন জানাতে ১৫ দিনের হিসাব বুধবার থেকে শুরু হবে বলে আইনমন্ত্রীর মতো মাহবুবে আলমও জানান।

তবে এর মধ্যেও সরকার তার প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে রাখতে পারে বলে মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

“এই ১৫ দিন রাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে হবে বলে আপিল বিভাগ রিভিউর রায়ে বলেন নাই। ধরেন, কেউ যদি রিভিউ না করে, তাহলে কি রাষ্ট্র বসে থাকবে?”

রিভিউ হলে শুনানি কখন হবে-  প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এটা সর্বোচ্চ আদালতই ঠিক করবেন। আমরা প্রত্যাশা করব, এটা যেন ঝুলে না থাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এটা যেন নিষ্পত্তি করা হয়।”

প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সুযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি (কামারুজ্জামান) যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা করেন, অবশ্যই সেই অধিকার সংবিধানেই দেওয়া আছে। রাষ্ট্রপতি কিভাবে তা নিষ্পত্তি করবেন, সেটা রাষ্ট্রপতির বিষয়।

“কিন্তু জেলখানায় পরোয়ানা গেলে তাকে প্রাণ ভিক্ষা করবেন কি না, রিভিউ করবেন কি না, এগুলো জানতে চাওয়া হয়। প্রাণভিক্ষার অধিকারটা সব সময় দেওয়া হয়। রিভিউর আগেও উনি চাইতে পারেন। তবে স্বাভাবিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার নিয়ম।”

মো. কামারুজ্জামান

একাত্তরে আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি বর্তমানে রয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেয়। বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেন বিচারকরা।

কাদের মোল্লার পর কামারুজ্জামানের আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় হয়েছে। তাতে তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশ হয়নি।

আপিল বিভাগে এখনও বিচারাধীন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, এটিএম আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ মো. কায়সারের মামলা।