পরীক্ষার আগের দিন বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তবে এই পরীক্ষা কবে হবে, সেই সিদ্ধান্ত না জানিয়ে তিনি বলেছেন, হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধে সাড়া মিলবে বলে এখনও আশায় আছেন তিনি।
“১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত রাখছি, কোনো তারিখ দিচ্ছি না। আশার থাকলাম, তাদের দিলে রহম হবে। তারা একটু দায়াবান হবেন, মাতৃভাষার মাসে তারা একটু নমনীয় হবেন।”
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের হরতালের কারণে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পাঁচ দিনের ৩৭টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে গেল।
১২ ফেব্রুয়ারি এসএসসিতে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা/ইসলাম শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, বৌদ্ধ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা এবং খ্রিস্ট ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল।
এদিন দাখিলে ফিকহ ও উসুলুল ফিকহ্ এবং এসএসসি ভোকেশনালে পদার্থ বিজ্ঞান-২ (১৯২৫) (সৃজনশীল), পদার্থ বিজ্ঞান-২ (৮১২৪) (সৃজনশীল/সাধারণ) ও দাখিল ভোকেশনালে পদার্থ বিজ্ঞান-২ (১৭২৫) (সৃজনশীল), পদার্থ বিজ্ঞান-২ (৮৫২৫)বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল।
হরতাল-অবরোধের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকে শিক্ষামন্ত্রী বিরোধী জোটকে তাদের কর্মসূচি পরীক্ষার আওতামুক্ত রাখার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন।
মঙ্গলবার হরতালের সময় শুক্রবার পর্যন্ত বর্ধিত করার পরও নাহিদ পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিরোধী জোটকে পুনর্বার কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ করেন।
কিন্তু সেই অনুরোধে সাড়া না পেয়ে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
“আমাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা সব থেকে বড়। তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের হিংস্রতার মুখে ফেলে দিতে পারি না। তাই পরীক্ষা স্থগিত রাখছি।”
হরতাল-অবরোধে নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার্থীরা সব থেকে বড় ভোগান্তিতে পড়েছে। তাদের পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন, পুরো দেশবাসীও উদ্বিগ্ন। কেউ এখন আর নিরাপদ নয়।”
আশঙ্কা, ভয়ভীতি আর উদ্বেগের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
“দয়া করে যেন এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধ করেন, সেই আবেদন এখনও রাখছি। শুধু পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেন, আমরা বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করছি,” আবারও আবেদন জানান নাহিদ।
বার বার অনুরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রশ্ন আসতে পারে যে আপনি এত বেহায়ার মত বার বার কেন বলতেছেন। এখানে বেহায়া বা হায়ার ব্যাপার নেই। ছেলেমেয়েদের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ, আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বার্থই সব থেকে বড়।
“অনেক কৌশলে এগিয়ে যেতে হচ্ছে, তাই অনেক কথার উত্তর প্রকাশ্যে দিতে পারছি না। দিতে চাইও না, কারণ আমাদের কৌশলের সাথে আগাতে হচ্ছে।”
হরতালের কারণে এসএসসির গত ২, ৪, ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই পরীক্ষাগুলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে নেওয়া হচ্ছে।
২ ও ৪ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা যথাক্রমে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি হয়েছে। এছাড়া ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় এবার ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।
ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়।