বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ জোটের অবরোধের মধ্যে এসএসসি শুরুর পর থেকে হরতালের কারণে এর আগে দুই দফায় পরীক্ষা পেছাতে হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
তখনও পরীক্ষা পেছাতে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারী ২০ দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু তার সেই আহ্বানে কোনো সাড়া মেলেনি।
এর মধ্যেই হরতাল শুক্রবার পর্যন্ত বাড়িয়ে বিএনপি জোটের বিবৃতি আসার পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
হরতালের মধ্যে পড়ায় বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাটি হবে কি না- তা নিয়ে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর উৎকণ্ঠার মধ্যে তিনি বললেন, বুধবার বিকাল ৪টায় পরীক্ষা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল দেওয়ায় বিএনপি জোটের সমালোচনা যেমন রয়েছে। তেমনি প্রতিবারেই আগের দিন সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোয় প্রস্তুতিতে ব্যাঘাতের অভিযোগ করে আসছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানালেও শিক্ষামন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট, হরতাল প্রত্যাহার না হলে বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাটি পিছিয়ে যাবে।
“তারা হিংস্র পথ বেছে নিয়েছেন, মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই হরতালে পরীক্ষা স্থগিত রাখা হচ্ছে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা ছেলেমেয়েদের জীবনের ঝুঁকি নেব না।”
১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এসএসসিতে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা/ইসলাম শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, বৌদ্ধ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা এবং খ্রিস্ট ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা রয়েছে।
ওই দিন দাখিলে ফিকহ ও উসুলুল ফিকহ্ এবং এসএসসি ভোকেশনালে পদার্থ বিজ্ঞান-২ (১৯২৫) (সৃজনশীল) এবং পদার্থ বিজ্ঞান-২ (৮১২৪) (সৃজনশীল/সাধারণ) বিষয়ের পরীক্ষার সূচি নির্ধারিত।
হরতালের কারণে এসএসসি ও সমমানে গত ২, ৪, ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
পরীক্ষার কারণে কর্মসূচিতে যে কোনো ছাড় আসছে না, তা বিএনপি জোটের পদক্ষেপে স্পষ্ট। কারণ এর আগেও দুটি পরীক্ষার দিন তারা হরতাল ডেকেছিল। এবারও পরীক্ষার নির্ধারিত দিনেই হরতাল ডাকা হয়েছে।
তবে শিক্ষামন্ত্রী এখনও আশা করছেন, লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে ২০ দল তাদের হরতালে পরীক্ষাকে আওতামুক্ত রাখবে।
তিনি বলেন, “যথাসম্ভব আবেদন-নিবেদন করেছি, শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আবেদন জানাচ্ছেন। আশার স্থান থেকে আমরা সরে আসতে চাই না।
“যারা হরতাল ডেকেছেন, তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হতেও পারে। এই আশায় বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত করছি না।”
কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা না হলে অন্তত পরীক্ষার দুই ঘণ্টা আগে ও দুই ঘণ্টা পর পর্যন্ত হরতাল শিথিলের আহ্বান ২০ দলের প্রতি জানিয়েছেন নাহিদ।
হরতালের কারণে এবারের এসএসসির শুরুর পর চার দিনের পরীক্ষাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিতে হচ্ছে। প্রথম দিন ২ এবং দ্বিতীয় দিন ৪ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা যথাক্রমে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় এবার ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।
ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়।
রাজনৈতিক সহিংসতায় শিক্ষা পরিবার সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এসব কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত করছে।”
“আশায় থাকলাম, তারা হরতাল প্রত্যাহার করবেন,” সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন শিক্ষামন্ত্রী।