গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে চার ‘আইএস জঙ্গি’

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও খিলক্ষেত থেকে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, নাশকতা চালিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চেয়েছিল তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2015, 10:26 AM
Updated : 19 Jan 2015, 12:53 PM

এই চারজন হলেন- সাখাওয়াতুল কবির, আনোয়ার হোসেন বাতেন, রবিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডেও পেয়েছে পুলিশ। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, রোববার গভীর রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও খিলক্ষেত এলাকা থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও জিহাদি লিফলেটও জব্দ করা হয়।

পুলিশের ভাষ্য, এই চারজনের মধ্যে সাখাওয়াত বাংলাদেশে আইএস এর ‘প্রধান সমন্বয়ক’। বাকি তিনজন তার সহযোগী।

রোববার রাতেই তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়। সোমবার তাদের ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাফর আলী বিশ্বাস।

শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মিজানুর রহমান চারজনের প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

তাদের আদালতে হাজির করার আগে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনায় নাশকতা চালিকা বিশ্ব মিডিয়ার নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চেয়েছিল তারা। তবে গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় তাদের পরিকল্পনা বিফলে গেছে।”

তিনি জানান, গ্রেপ্তার সাখাওয়াতের ভায়রা শামীম আহমেদ ও বাতেনের ভগ্নিপতি সায়েম পাকিস্তানে থাকতেন এবং তারা দুজনেই আইএসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

“তারাই বাংলাদেশে সাখাওয়াতকে সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে। সাখাওয়াত পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেছেন।”

সম্প্রতি পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে শামীম ও সায়েম নিহত হন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

শেখ নাজমুল আলম জানান, কারাবন্দি জেএমবি নেতা মাওলানা সাঈদুর রহমানের মেয়ের জামাই এজাজও পাকিস্তানে আইএস এর মতাদর্শ প্রচারে জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি তিনিও পাকিস্তানে পুলিশের হাতে নিহত হন।

“আটক সাখাওয়াত তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বাংলাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করত।”

গ্রেপ্তার নজরুল বাংলাদেশে আইএস এর মত প্রচারের জন্য অর্থ সহায়তা দিতেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও বাংলাদেশে কতোজন এ সংগঠনের হয়ে কাজ করছে, কারা তাদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে- সেসব বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। 

রিমান্ডে এসব বিষয়েই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান।

ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গত বছর খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা। ইরাকের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি কয়েকজন মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরশ্ছেদ করে ইন্টারনেটে তার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে উগ্র ইসলামিক এই সংগঠন। তাদের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৮০টির বেশি দেশের ১৫ হাজারের বেশি ‘যোদ্ধা’ রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা।

বিভিন্ন দেশ থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ ঠেকাতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দিয়ে গত বছর একটি প্রস্তাবও পাস করে নিরাপত্তা পরিষদ।

গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাও হয়েছে।

মামলায় বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন হামদান (২৪)। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করাও তার উদ্দেশ্য ছিল।

এছাড়া ইসলামিক স্টেটের জন্য অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে মো. হিফজুর রহমান নামের ২২ বছর বয়সী আরেক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিলেটের শাহজালাল উপ-শহর এলাকার সরকারি তিব্বিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিফজুর আগে নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য ছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ।

ওই সময়ই রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে মো. আসিফ আদনান (২৬) ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল (২৪) নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে গোয়েন্দা পুলিশের দাবি।

গত অগাস্টে ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচজন আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির কাছে জিহাদের শপথ নিচ্ছেন। ওই ভিডিওর সঙ্গে ইংরেজি ক্যাপশনে তাদের  বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়।

আদনান ও তানজিল উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আনসারউল্লাহ বাংলাটিম’ এর সদস্য। এদের মধ্যে আদনান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক বিচারপতির ছেলে এবং তানজিলের মা একজন ওএসডি যুগ্ম সচিব।