কমলাপুরে ট্রেন-লরি সংঘর্ষে নিহত ৬

রাজধানীর কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে স্টেশনমুখী একটি ট্রেনের সঙ্গে লরির সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2014, 07:44 AM
Updated : 29 Dec 2014, 07:44 AM

রেল পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একটি ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে ঢোকার মুখে লরিটি সামনে পড়লে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, “লরির চালক হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল, নয়তো তার গাফিলতি ছিল।”

দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ওই ট্রেনেই নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে ঢাকা আসছিলেন রিকশাচালক কাশেম। তিনি ছিলেন ইঞ্জিনের পেছনে ছাদে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, ট্রেনটি যখন স্টেশনের আগে কনটেইনার ডিপোতে ঢোকে লরিটি তখন পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যাচ্ছিল। গতিও খুব বেশি ছিল না।

কিন্তু ট্রেন দেখেও চালক লরি না থামিয়ে এগিয়ে গেলে ইঞ্জিনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং লরিটি ঘুরে গিয়ে ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে সজোরে আঘাত করে। ওই অবস্থায় লরিটি প্রায় ৫০ গজ ছেঁচড়ে নিয়ে ট্রেনটি থেমে যায়।

এ সময় ট্রেনের ইঞ্জিনের পেছনে থাকা বগি ও ছাদের আরোহীরাও আহত হন।

আহত আনসার সদস্য মিজান বলেন, ঘটনার সময় তিনি এবং হান্নান নামের আরেক আনসার সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। ডিপোর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে লরি বা কভার্ড ভ্যান আসে। তাই ওই দুই জায়গায় দুজন সব সময় ডিউটিতে থাকে।

তিনি বলেন, “ট্রেন আসতে দেখে আমি লরি চালককে থামার সংকেত দেই। কিন্তু চালক সংকেত না মানায় চোখের পলকে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।”

ইঞ্জিনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর লরিটি ছিটকে এসে ধাক্কা দিলে পেছনের বগিটি কাত হয়ে লাইনে পড়ে যায়।  ওই অবস্থায় ট্রেন আরো এগিয়ে যাওয়ায় লরির চেসিস পুরো ভেঙেচুড়ে যায় এবং ট্রেনের বগির একপাশের দেওয়াল ভেঙে দুমড়ে যায়।

মিজান কীভাবে আহত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “লরি ধাক্কা ধাওয়ার পর পাশের দেওয়ালের কিছু অংশ এসে আমার ওপর পড়লে আমি আহত হই।”

কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে পাঠানোর পর মৃত্যু হয় আরো চারজনের।

নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেছে। এদের মধ্যে নাইম ইসলাম মুগদার একটি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ত বলে তার খালাত ভাই মাহফুজ জানিয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেলে লাশ সনাক্তের পর মাহফুজ সাংবাদিকদের বলেন, নাইমের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ, তার বাবার নাম ইউনুস আলী।

নিহত মুজিবুর রহমানের (৫০) স্ত্রী সখিনা বেগম জানান, তারা মিরপুর শিয়ালবাড়ি ৭ নম্বর রোডে থাকেন। ভোরে কাজে নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন মুজিবুর। ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। 

রাতে মর্গে এসে আলমগীর নামে ৩৫ বছর বয়সী আরেকজনকে সনাক্ত করেন তার স্ত্রী পারভীন।

তিনি জানান, আলমগীর লেগুনা চালাতেন। তাদের বাসা কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনায়। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

এছাড়া মর্গে এসে ইসমাইল নামে আরেকজনের লাশ সনাক্ত করেন তার বোন ময়না বেগম।

তিনি বলেন, ইসামাইল ও আহত বেলাল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় বেড়াতে আসছিল। তাদের বাসা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ইসমাইল ফতুল্লায় একটি তোষকের দোকানের কর্মচারী ছিলেন।

এছাড়া এক নারী ও এক যুবকের পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, দুর্ঘটনার পর ৯ জন আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন।

এরা হলেন- আনসার সদস্য মিজানুর রহমান (২৫), বাবুল (৪৩), নাসির (২২), মোস্তফা প্রধান (৪০), জাবেদ (৪৫), বিল্লাল (৩০), জিন্দার মোল্লা (৪০), হারুন (৪৫) এবং  সুমন (২৫)।

এছাড়া কালাম (৩২) ও মিলন (৪৫) নামে আরো দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।

আহতদের দেখতে সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান রেলমন্ত্রী। তিনি আহতদের প্রত্যেককে বিশ হাজার করে টাকা দেন।

নিহতের পরিবারকেও মন্ত্রণালয়ে ডেকে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী জানান, দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে দেখতে রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।

দুর্ঘটনার পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত বগি সরিয়ে নেওয়ার পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

</div>  </p>