খালেদার আবেদন মঞ্জুর, সাক্ষ্য পেছাল

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর পর তার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন এ মামলার নতুন বিচারক।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2014, 07:28 AM
Updated : 7 Jan 2015, 07:26 AM

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে বাদীর সাক্ষ্য শোনার জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি নতুন দিন রেখেছেন। একই দিনে জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও শুনানির দিন রাখা হয়েছে।

খালেদার হাজিরা ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই পুলিশ বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাস ও আশেপাশের সড়কগুলোতে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। যানবাহন ও মানুষ চলাচলের ওপরও আরোপ করা হয় কড়াকড়ি।

অন্যদিকে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল করতে থাকেন।

বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হওয়ার পর ১২টার দিকে বকশী বাজার মোড় থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। পরে তা নাজিমউদ্দিন রোড, পলাশী মোড়, চান খাঁর পুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিলে পলাশীর মোড় হয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর।

এ সময় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) সঙ্গে বিএনপির একদল কর্মীকেও লাঠি হাতে গাড়ির সামনে সোমনে এগোতে দেখা যায়। তাকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল।

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি /বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

খালেদা জিয়ার গাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢুকে যাওয়ার পর বাইরেও পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।

হালকা গোলাপী রংয়ের শাড়ি পরিহিত খালেদা গাড়ি থেকে নেমে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের স্লোগানের মধ্যে এজলাসে ঢোকেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস, শহীদুল্লাহ চৌধুরী এ্যানীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

খালেদা আসার আগেই এ মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের কথা জানিয়ে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। এ মামলার দায়িত্ব পাওয়া নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ১৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে খালেদার আবেদন মঞ্জুর করেন।

খালেদার আইনজীবীদের একের পর এক আবেদনের মধ্যে মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ চারটি ধার্য তারিখেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে না পারায় এদিন তার বাকি জবানবন্দি শোনার তারিখ ছিল। তবে বিচারক শুনানি মুলতবি করে আগামী ৭ জানুয়ারি বাদীর সাক্ষ্য শোনার নতুন তারিখ রাখেন।

বেলা সোয়া একটার দিকে খালেদা যখন আদালত ত্যাগ করেন ততোক্ষণে আদালতের বাইরের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে। তিনি নির্বিঘ্নেই গুলশানের বাড়িতে ফেরেন।

পরে খালেদার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মিয়া আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আদালতে বলেছি যে, আইনের ব্যত্যয় করে, অনিয়ম করে দুই মামলায় চার্জ ফ্রেম করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে হাই কোর্টে আমাদের একটি আবেদন বিচারাধীন।

“বিচারক আমাদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৭ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।”

খালেদার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা আদালতকে বলেছি, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা, রাজনৈতিক মামলা। ইতিহাসে এই মামলাটি থাকবে, সেখানে আপনাদের নাম যেমন থাকবে, আমাদের নামও পাশাপাশি থাকবে। সেই ইতিহাসে যেন দেখা যায় যে, দেশে আইনের শাসন আছে, মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে। বাইরে থেকে কে কি বলল, কতটা কি প্রভাব আছে সেদিকে আপনি দৃষ্টি দেবেন না, এটাই আমরা আশা করি।”

এর আগে শুনানিতে তিনি আদালতকে বলেন, “আপনি এ মামলায় নতুন, সবকিছু এখনো জানেন না। আমরাও আপনার সম্পর্কে জানি না। এজন্য আমাদের কিছু সময় দিন। আপনিও মামলা সম্পর্কে জেনে নিন।”

সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি করেন অভিযোগ গঠনকারী বিচারক ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায়। তাকে সরকার সম্প্রতি বদলি করলে খালেদার মামলার দায়িত্ব পান আবু আহমেদ জমাদার।  

বাসুদেব রায়কে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি বিচারক বদল নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলে, এটা বিচারের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারের শামিল।

গত ১৯ মার্চ বাসুদেব রায়ের আদালত জিয়া এতিমখানা (অরফ্যানেজ) ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করে।

এরপর সময়ের আবেদনের কারণে কয়েক দফা তারিখ পিছিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে খালেদার অনুপস্থিতিতেই এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এ দুটি দুর্নীতি মামলা বাতিলে উচ্চ আদালতে গিয়ে বিফল হওয়ার পর বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন খালেদা।

কিন্তু সব আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পরও বিভিন্ন আবেদন করতে থাকেন খালেদার আইনজীবীরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি।

মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি।

সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ। এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।