নীল দল সভাপতি প্রার্থী ছিলেন জিয়া চেয়ারের প্রস্তাবক!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল নীল দলের সভাপতি প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ একদা অর্থনীতি বিভাগে জিয়াউর রহমান চেয়ার চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে  কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2014, 02:24 PM
Updated : 17 Dec 2014, 03:07 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আগামী ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনে আওয়ামী-বামপন্থী নীল দল এবং বিএনপি ও জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করবেন। 

নীল দলের সভাপতি প্রার্থী বর্তমান সভাপতি এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নীল দলের প্রার্থী বাছাই শেষ হয়েছে।

সভাপতি পদে নীল দলের প্রার্থী হিসেবে তার নাম চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ফরিদ উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফরিদ উদ্দিন এক সময় প্রচণ্ড আওয়ামী লীগবিরোধী ছিলেন। এমনকি ২০০৫ সালে তিনি অর্থনীতি বিভাগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে চেয়ার চালুর প্রস্তাব করেছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের মার্চ মাসে বিভাগের শিক্ষকদের এক সভায় আলোচিত প্রস্তাবটি ফরিদ উদ্দিন তোলেন বলে জানান সেখানে উপস্থিত একজন সিনিয়র শিক্ষক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সভাটি ছিল চেয়ারম্যান হিসেবে শামসুদ্দীন আহমেদের শেষ সভা। সেখানে ফরিদ সাহেব এই প্রস্তাব তুললে তার বিরোধিতা করেন অধ্যাপক আশরাফ উদ্দীন। অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

“প্রস্তাবের বিরোধিতা করে অধ্যাপক এ কে এম মনোয়ার উদ্দিন বলেন, ‘চেয়ার করতে চাইলে তাহেরুল ইসলাম, অধ্যাপক হুদার মত বিভাগের পুরোনো শিক্ষকদের নামে হতে পারে। এমনকি ভাসানী, সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতাদের নামে হতে পারে। উর্দিপরা কোনো শাসকের নামে কেন?’

“প্রস্তাবের পক্ষে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দিয়ে শুরু হোক। পর্যায়ক্রমে বাকিদের নামেও হবে’।”

ওই শিক্ষক বলেন, “প্রবল বিরোধিতার মুখে সে সভায় এই প্রস্তাব আর পাশ হয়নি।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বুধবার ফরিদ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা বানোয়াট কথা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে কোনো চেয়ার হয় না। এটার আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা ওই প্রস্তাবের পক্ষে কোনো কথা বলিনি, যার প্রেক্ষিতে ওই চেয়ার স্থাপন হয়নি।”

ফরিদ উদ্দিনের প্রসঙ্গে একজন শিক্ষক মন্তব্য করেন, “মওদুদ আহমদ (দল বদলের জন্য পরিচিত বিএনপি নেতা মওদুদ) শুধু রাজনীতিতেই নেই। শিক্ষকতাসহ অন্য পেশাতেও রয়েছে।”

এ বছর শিক্ষক সমিতির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক শফিক উজ জামান বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি  বছর  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভোট দিয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৫ সদস্যকে নির্বাচিত করেন।  চলতি মাসেই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে।

নতুন কমিটি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এরইমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার রাতেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে।

তবে আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং নতুন প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এবার শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দলের হয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি একইসঙ্গে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য।

সহ-সভাপতি পদে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ, যুগ্ম সম্পাদক পদে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ, কোষাধ্যক্ষ পদে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এছাড়া সমিতির সদস্য পদে নীল দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন- সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কলা অনুষদে ডিন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া,  অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভুইয়া, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুস ছামাদ, ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান,  মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মুবিনা খন্দকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ।