শিগগিরই ‘সব প্রশ্নের’ জবাব দেবেন রুবেল

‘ব্ল্যাকমেইল’ এর অভিযোগ এনে আগেই থানায় জিডি করেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেন; কিন্তু একদিন পর নারী নির্যাতন আইনে চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপীর মামলায় সেই রুবেলই আসামি বনে যান।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2014, 02:09 PM
Updated : 15 Dec 2014, 04:05 PM

২৫ এ পা দিতে যাওয়া রুবেল সোমবার উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ‘কোড অব কনডাক্ট’ এর কথা বলে গত তিন দিন মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও দুই এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ‘সব প্রশ্নের’ জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

আর তার আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আইনগতভাবেই ‘সব ষড়যন্ত্রের’ মোকাবেলা করা হবে।

তরুণ তারকা রুবেলের বিরুদ্ধে উঠতি অভিনেত্রী হ্যাপীর এই মামলার বিষয়টি গত তিন দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও গণমাধ্যমের অন্যতম আলোচিত বিষয়। ‘কিছু আশা কিছু ভালবাসা’ চলচ্চিত্রের নায়িকা ২১ বছর বয়সী হ্যাপী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তাকে বিয়ে করে ফেললেই এই সমস্যার সুখী সমাধান হয়ে যেতে পারে।      

৫৩ ওয়ানডেতে ৬৯ উইকেটশিকারী রুবেল গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন, যাতে হ্যাপীর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

রুবেলের আরেক আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, আট থেকে দশ মাস আগে ফেইসবুকে হ্যাপীর সঙ্গে রুবেলের পরিচয়। পরে ফ্যান হিসাবে সে রুবেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেন। সম্প্রতি রুবেল বুঝতে পারেন যে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চলছে। এ কারণেই তিনি জিডি করেন।

“মেয়েটি কিছুদিন যাবত বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিল। সে বলতে চাচ্ছিল যে রুবেল যদি বিয়ে না করে তাহলে সে মামলা করবে।”

ভয়ভীতি দেখিয়ে হ্যাপী তার ক্ষতি করতে পারেন বলেও ওই জিডিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রুবেল।

কিন্তু পরদিন একই থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন হ্যাপী, যাতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগ আনা হয় রুবেলের বিরুদ্ধে।

হ্যাপী বলছেন, বছরখানেক আগে ফেইসবুকের মাধ্যমে রুবেলের সঙ্গে তার পরিচয়, আর ঘনিষ্ঠতা নয় মাস ধরে।

সেদিন তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিয়ের কথাবার্তা চলার মধ্যেই আরেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে রুবেল। এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে সে এড়িয়ে যায়।”

পরে রুবেল তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন অভিযোগ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “গতকালও সে (রুবেল) বলেছে বিয়ে করতে পারি। আজকে বলেছে, সে বিয়ে করতে পারবে না। তাই মামলা করেছি-মামলা চালিয়ে যাব।”

মিরপুরের ওসি সালাহউদ্দিন বলছেন, কমার্স কলেজের কাছে রুবেলের একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ফ্লাটে হ্যাপীর যাওয়া-আসা ছিল।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী হ্যাপীকে মামলার পরপরই পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার পর তিনি নিজের বাসায় ফেরেন।

‘নয় মাস ধরে সম্পর্কের’ অনেক প্রমাণ আছে দাবি করে হ্যাপী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুবেলকে আমি খুব ভালবাসি। এখন সমঝোতা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। রুবেল আমাকে বিয়ে করলেই মামলা তুলে নেওয়া হবে। আর বিয়ে না করলে একজন নারীকে প্রতারণার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”

প্রথম দুই দিন কোনোভাবেই সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেননি রুবেল। সোমবার জামিন নিতে হাই কোর্টে এসেও সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।

জামিন পেয়ে রুবেল আদালত থেকে বের হওয়ার পরপরই সংবাদকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন। একের পর এক ‘বাউন্সারের’ সামনে বরাবর ‘ডাক’ করে যান জাতীয় দলের এই পেসার।

সাংবাদিকদের প্রতিটি প্রশ্নেই পাশে দাঁড়ানো আইনজীবীদের দেখিয়ে তিনি বলেন, তারাই সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

সাংবাদিকরা এরপরও তার মুখ থেকে প্রশ্নের উত্তর শুনতে চাইলে রুবেল বলেন, “দুই এক দিনের মধ্যে আমি সাংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের সব প্রশ্নের জবাব দেব। আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করব।”

তার আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “রুবেল শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটের নয়, তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সম্পদ। তিনি আগেই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। বুঝতে পেরে তিনি একটি জিডিও করেছিলেন। এই মামলার মাধ্যমে তার সেই আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। এই মামলা সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক।”

চার সপ্তাহের এই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে রুবেলকে বিচারিক আদালতে যেতে হবে। সেখানে ‘আইনি পথেই ষড়যন্ত্র-হয়রানির মোকাবেলা’ করা হবে বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।

অন্যদিকে জামিন শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ বলেন, “উনি (রুবেল) একজন ক্রিকেটার। উনি ক্রিকেট খেলবেন। নারীর মন নিয়ে খেলা ঠিক নয়।”

বশির উল্লাহ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “আমরা জামিন প্রদানের বিরোধিতা করে শুনানিতে বক্তব্য দিয়েছি। তবে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন।”

সাংবাদিকদের এড়াতে পারলেও আদালতে ভক্তদের ঠিকই সময় দিতে হয়েছে রুবেলকে। উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে আদালতের একেবারে পেছনের সারিতে বসে ‘শান্ত’ ভঙ্গিতে তাকে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায়। এ সময় ভক্তদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স (আদালত) ভবনের সামনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথার পর্ব চুকিয়ে রুবেল যখন মূল বিচার ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন, সে সময়ও একদল উৎসুক জনতা তার পেছনে এগিয়ে যায়।

এক পর্যায়ে তারা স্লোগানও দেন- ‘রুবেল ভাইয়ের কিছু হলে/জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’।

রুবেল জিডি করার পর বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মিরপুর থানার এসআই রাসেল। আর হ্যাপীর মামলার তদন্ত করছেন একই থানার এসআই মাসুদ পারভেজ। 

এসআই রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের দিন জিডি হলো। পরদিনই আবার মামলা হলো। দেখলাম জিডির বাদী মামলায় হয়ে গেল আসামি।” 

অভিযোগের বিষয়ে দুজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি বলে জানান এই উপ পরিদর্শক।