সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধন

হেফাজতের হামলার পর পুনর্নির্মিত অপরূপ নান্দনিক সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়েছে।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2014, 02:16 PM
Updated : 10 Dec 2014, 02:16 PM

বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই উৎসবমুখর ছিল সিলেট।

প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অপরূপ নান্দনিকতার সঙ্গে সিলেটি ঐতিহ্যকে মিশিয়ে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনারটি।

সিলেটের চা বাগানগুলোর ফাঁক দিয়ে নতুন ভোরে নব দিগন্তে যেভাবে রক্তিম সূর্যের দেখা মেলে, সেই রূপ আর আবহমান বাংলার সংগ্রামী চেতনাকে প্রস্ফুটিত করে নির্মাণ করা হয়েছে এটি।

কয়েকদিন আগে কাজ শেষ হওয়া পুনর্নির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সিলেটজুড়ে।

এ উপলক্ষে পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আঁকা হয় দৃষ্টিনন্দন আল্পনা। বুধবার দুপুর থেকেই লোকারণ্য হয়ে পড়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন।

উদ্বোধন উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকেই চলছে থাকে মুক্তিযুদ্ধের গান ও লোকগীতি।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।

অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব প্রমুখ।

২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেট নগরীতে হেফাজতে ইসলামীর মিছিল থেকে হামলা চালানো শহীদ মিনারে। তাদের তান্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহীদ মিনার।

পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন নকশা করে শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

১শ’ ফুট চওড়া ভূমির উপর ৪৫ ফুট উচ্চতার স্তম্ভটির মাধ্যমে আন্দোলিত ভূমি থেকে জেগে ওঠা বাঙালির আবহমান সংগ্রামী চেতনাকে উপলক্ষ করে শহীদ মিনারটির দৃষ্টিনন্দন নকশা আঁকেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক শুভজিত চৌধুরী।

তার সহযোগী স্থপতি হিসেবে কাজ করেন কৌশিক সাহা, সিপাউল বর চৌধুরী, ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস ও জিষ্ণু কুমার দাস।

শহীদ মিনারের স্থপতি শুভজিত চৌধুরী বলেন, আন্দোলিত ভূমিকে শহীদ মিনারের মুখ্য বিষয়বস্তু হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। মাঝের স্তম্ভের ডানে-বাঁয়ে যে দুটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোতে জানালার মতো চারটি অংশ রয়েছে। এসব জানালায় বাঙালির মুক্ত জীবনকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শহীদ মিনার এলাকায় ৩৩ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছে। সমতল ভূমি থেকে ১শ ফুট চওড়া আন্দোলিত ভূমি তৈরি করা হয়েছে।

সেই আন্দোলিত ভূমি থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি স্তম্ভ। মাঝের স্তম্ভের উচ্চতা ৪৫ ফুট।

তিনটি স্তম্ভের সম্মিলিত প্রস্থ ৩০ ফুট। স্তম্ভগুলো কংক্রিট দিয়ে তৈরি করে এর ওপর শ্বেতপাথর বসানো হয়েছে। মাঝের স্তম্ভে বসানো হয়েছে রক্তিম সূর্য। সূর্যোদয়ের মাধ্যমে নতুন দিনের কথা জানাতে সূর্যটি স্তম্ভে স্থাপন করা হয়েছে। স্টিলের তৈরি লাল রঙের এই সূর্যের ব্যাস সাড়ে পাঁচ ফুট। 

এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয় ১৯৮৮ সালে।

মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইয়ামিন চৌধুরী বীরবিক্রম, ইফতেখার হোসেন শামীম, ছদরউদ্দিন চৌধুরী ও মো.  শওকত  আলীর উদ্যোগে ও কিছু প্রতিশ্রতিশীল মানুষের হাত ধরে গড়ে ওঠে এই শহীদ মিনার।

পরবর্তীতে এটি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা লাভ করে।