হট্টগোলের মধ্যে খালেদার মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের তুমুল হৈ চৈ, বিচারককে উদ্দেশ্য করে গালাগালির মধ্যে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2014, 03:56 PM
Updated : 8 Dec 2014, 03:56 PM

সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজের অস্থায়ী আদালতে বাদীর সাক্ষ্য নেওয়ার পর আগামী ১৭ ডিসেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করেন বিচারক বাসুদেব রায়।

সাক্ষ্যগ্রহণের তৃতীয় দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে মামলার এজাহারের অংশ তুলে ধরেন বাদী।

বিএনপির ভাষায় রাজনৈতিক হয়রানিমূলক এই মামলার বৈধতা এবং বিচারকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন খালেদা। তার পক্ষে উচ্চ আদালতের আদেশ না আসার পর বিচারিক আদালতে বিচার শুরু হয়।

গত ১ ডিসেম্বর বাদীর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগহণের সময়ও এজলাসে তুমুল হট্টগোল করেছিলেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। সেদিনের মতো এদিনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বিএনপি চেয়ারপারসন।    

সোমবার আদালতেদর কার্যক্রমের শুরুতেই সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি চেয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা, কিন্তু বিচারক তা নাকচ করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেন।

এ আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আদালত পরিবর্তনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমান থাকা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে খালেদার অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে এই আবেদন করা হয়।

আবেদন খারিজ করে দিলে খালেদার আইনজীবীরা তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফের আবেদন জানান। এটিও শুনানি শেষে খারিজ করে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর উদ্যোগ নেন বিচারক।

বিরতির পরে খালেদার আইনজীবীরা আবেদন খারিজ আদেশের কারণ জানতে চেয়ে এবং এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলে আরও একটি আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়।

এসব আবেদন খারিজ হওয়ায় বাদী ও বিচারককে উদ্দেশ্য করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সামনেই গালাগালি করতে থাকেন বিএনপির কনিষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী।

এ সময় এজলাসে আসামি পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নাল আবেদীন এবং বর্তমান সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের আইনজীবী ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল, শাহীন আহমেদ খান, হুমায়ুন পাঠান, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর কবির হোসাইনসহ আরও কয়েকজন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বাদী ও বিচারকের প্রতি কটূক্তি বন্ধ করার জন্য বার বার অনুরোধ করতে থাকলেও আসামি পক্ষের তুমুল শব্দে তাদের কণ্ঠস্বর তলিয়ে যায়।আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কয়েকজনকে বসার আসনের টেবিল চাপড়াতেও দেখা যায়।

কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের জুনিয়র বন্ধুদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা করিয়েছেন। তারা আদালতে অশোভন আচরণ করেছেন।”

জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদেরকে সাজা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমরা আদালতের কাছে বার বার উচ্চ আদালতের কথা বললেও বিশ্বাস করছেন না বা শুনছেন না। যা একটি বিচারিক নৈরাজ্য।”

বাসুদেব রায়ের এই আদালতের প্রতি খালেদা জিয়ার কোনো আস্থা নেই বলে জানান তিনি।

দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, “প্রতিটি ধার্য তারিখেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বিভিন্ন ইস্যু তুলে বিচারে বিলম্ব করতে চান। কিন্তু এ মামলা থেমে থাকার জন্য কোনো আদেশ তারা উচ্চ আদালত থেকে আনতে পারেননি।”

হ্ট্টগোলের মধ্যেই আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বাদী বলেন, কিভাবে সৌদি আরবের কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে এতিমদের জন্য আসা অর্থ আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন আসামিরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট দেওয়া হয় অভিযোগপত্র।  

খালেদা ও তারেক ছাড়া মামলার অন্য চার আসামি হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমান।

জামিনে থাকা কামাল ও শরফুদ্দিন সোমবারও আদালতে হাজির ছিলেন। তারেক বাংলাদেশের বাইরে আছেন, তার পক্ষে আইনজীবীরা আদালতে হাজিরা দেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর শুরু থেকেই পলাতক।

দুদক কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী। ওই মামলার বিচারও চলছে বাসুদেব রায়ের এই আদালতে।