দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে: টিআই

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করা ‘দুর্নীতির ধারণাসূচকে’ এ বছর বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2014, 07:05 AM
Updated : 3 Dec 2014, 02:29 PM

বিশ্বের ১৭৫টি দেশ ও অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা এ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫ নম্বরে।

১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার ২৫। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

২০১৩ সালে এই সূচকে ১৭৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছিল ১৩৬ তম অবস্থানে। 

উল্টো দিক থেকে বিবেচনা করলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪তম। এই হিসাবে গতবছর বাংলাদেশ ১৬তম অবস্থানে ছিল।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ‘দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০১৪’(সিপিআই)  প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক। এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।”

দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি; নিয়ন্ত্রণের অভাব; দুদকের স্বাধীনতা ‘খর্বের অপপ্রয়াস’; পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ ও রেলে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’; শেয়ার বাজার, হলমার্ক ও ডেসটিনির ঋণ কেলেঙ্কারিসহ আর্থিক খাতের ‘ব্যাপক অনিয়ম’ এবং অন্যান্য খোতে দুর্নীতির ‘মহোৎসব’ এই অবনমনে ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইফতেখারুজ্জামান জানান, এ বছর যেখানে বৈশ্বিক গড় ৪৩, সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫। দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় সর্বনিম্নে অবস্থান।

২০১৪ সালের সূচকে ৯২ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক। গতবছর এ দেশটি একই অবস্থানে ছিল, স্কোর ছিল ৯১।

আর টিআইয়ের বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়ার স্কোর গতবারের মতোই ৮। একই স্কোর নিয়ে এবার সোমালিয়ার সঙ্গে আছে উত্তর কোরিয়া। 

আর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ২৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে গিনি, কেনিয়া, লাওস ও পাপুয়া নিউগিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত সময়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

এবার ৯২টি দেশের স্কোর আগের তুলনায় বেড়েছে, ৪৭টি দেশ আগের স্কোর ধরে রেখেছে। আর ৩৬টি দেশ ও অঞ্চলের স্কোর গতবারের তুলনায় কমেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, “দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার এবং জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণ। কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

দুর্নীতি দূর করতে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে ‘দায়িত্বশীল’ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা, সংস্থার উপ নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্নীতির এই সূচক নির্ধারণে টিআইবি কোনো ভূমিকা রাখে না, টিআইবির গবেষণা থেকে পাওয়া কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণও সিপিআই-তে পাঠানো হয় না।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার করা প্রতিবেদন ও জরিপ এবং বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে টিআই কেন্দ্রীয়ভাবে এই সূচক তৈরি করে, যা বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবেও প্রকাশ করা হয়।