তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর পরও হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব কাদের, তা নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো একমত হতে পারেনি।
Published : 24 Nov 2014, 09:50 PM
এসব সংগঠনের কোনোটির বক্তব্য, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের; কোনো কোনো সংগঠনের মতে, ক্রেতাদের দায় থাকলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মূল দায়িত্ব কারখানা মালিক দেলোয়ার হোসেন এবং পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় আগুনে সরকারি হিসাবে ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। অগ্নিকাণ্ডে আহত হন দেড় শতাধিক শ্রমিক।
নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষতিপূরণ পেলেও আহত শ্রমিকদের অনেকেই এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
ওই অগ্নিকাণ্ডের দুই বছরপূর্তিতে সোমবার দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে সকালে জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, সাভারের নিশ্চিন্তপুরে শ্রমিক সমাবেশ ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশন।
প্রেসক্লাবে অনশনের পরে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমমের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, “এই ব্যবসার মেজর প্রফিট বায়ারদের পকেটে যায় এবং আমাদের শ্রমিকরা মালিকের অধীনে কাজ করলেও মূলত বায়ারদের ফরমায়েশ অনুযায়ীই কাজ করে। সুতরাং ক্ষতিপূরণের দায়-দায়িত্বের সিংহভাগ তাদেরই বহন করতে হবে।”
তিনি জানান, ওই সময় তাজরীন ফ্যাশনসের তৈরি পোশাকের ক্রেতা ছিল ওয়ালমার্ট, ডিকিস, ডেলটা অ্যাপারেল, সার্স, অ্যানি, ডিজনি, কিক, কার্ল রিকার, পিয়াজা ইতালিয়া, এডিনবার্গ উলেন মিল, টেডি স্মিথ, ই এল কোর্ট লেংস, সিঅ্যান্ডএ এবং লি ফুং।
এই ১৪টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু সিঅ্যান্ডএ ও লি ফুং সরকারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বলে এই শ্রমিক নেতা জানান। বাকি ১২টি প্রতিষ্ঠান কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
“এখানে মালিকদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই, এটা মূলত শ্রমিক এবং বায়ারদের মধ্যেকার সংগ্রাম,” বলেন আমিরুল।
এই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রথমত দায়ী ওই কারখানার মালিক দেলোয়ার এবং বিজিএমইএ।
“সরকারের কাছে আমাদের দাবি- অবিলম্বে দেলোয়ারের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক এবং পাশাপাশি বিজিএমইএকেও ক্ষতিপূরণের জন্য চাপ দেওয়া হোক।”
তবে ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষকেই ছাড় দিতে নারাজ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দেখতে হবে গার্মেন্ট শিল্পের বেনিফিশিয়ারি কারা; বায়ার, বিজিএমইএ ও সরকার। তিন পক্ষকে মিলেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অনেকেই বলেছেন, তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। আর যারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য যথেষ্ট নয়।
শ্রমিক নেতারা জানান, আহত দেড় শতাধিক শ্রমিকের মধ্যে ৯৪ জনকে একলাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে আহত তাজরীন ফ্যাশনসের কর্মী আনজু ও লাইলী কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানান। ক্ষতিপূরণের আশায় একাধিকবার বিজিএমইএ কার্যালয়ে গিয়েও তারা বিফল হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
আনজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই পর্যন্ত দুই বার বিজিএমইএ অফিসে গেছি। ওরা আমারে কইলো খাতায় তো আপনের নাম নাই। আপনি আগে নাম তোলার ব্যাবস্থা করেন। আমি তো জানি না, কার লগে যোগাযাযোগ করলে খাতায় নাম উঠবো।”
লাইলী বলেন, “আমাগোরে যেই যে মিছিলে ডাকে সেই খানেই যাই। কিন্তু আজ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাই নাই।”