সানি, মিজান, ফারুককে খুঁজছে এনআইএও

ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান এবং ওই ঘটনার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী ফারুক হোসেনকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাও (এনআইএ) খুঁজছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2014, 12:10 PM
Updated : 18 Nov 2014, 01:40 PM

মঙ্গলবার ঢাকা সফররত এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তালিকা এনআইএ কর্মকর্তারা সোমবারের বৈঠকে দিয়েছেন, ততে সানি, মিজান ও ফারুকের কথা রয়েছে। আর বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থাগুলোও তাদের খুঁজছে।   

“ছিনতাই হওয়া বোমারু মিজান ও ছালেহিন এবং এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসাবে আমরা যাকে সন্দেহ করি, সেই ফারুক হোসেন ওরফে জামাই ফারুকের ক্ষেত্রে এনআইএর দেওয়া তথ্যের মিল রয়েছে।”

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

পালানোর পথে ওইদিনই মির্জাপুরে গ্রেপ্তার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি।

বাকি দুজনের কোনো খোঁজ না পেয়ে বাংলাদেশের পুলিশ তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, “এনআইএ মনে করছে, বর্ধমানের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা আছে। এ কারণেই তাদের খুঁজছেন ভারতের গোয়েন্দারা।”

বোমা বিশেষজ্ঞ মিজান পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির তরুণ জঙ্গিদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলেও এনআইএ কর্মকর্তাদের সন্দেহ।

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর এনআইএ তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপরই ওই ঘটনায় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা বলেন এ সংস্থার কর্মকর্তারা।

এনআইএ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতীয় গোয়েন্দারা আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পেয়েছেন।  ওই জঙ্গিরা বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যারও ছক কষছে।

এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং এনআইএর চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার ঢাকায় পৌঁছায়।

দুই নেত্রীকে নিয়ে জঙ্গি ষড়যন্ত্রের খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মনিরুল বলেন, “ওপেন সোর্স থেকে এতোদিন যে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, তার সঙ্গে এনআইএর দেওয়া তথ্যের গরমিল রয়েছে।

“সেখানে (পশ্চিমবঙ্গ)  বিস্ফোরক তৈরি করা হচ্ছিল- এটা ঠিক। সেগুলো কোন কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা জঙ্গিদের ছিল- সে বিষয়ে এনআইএ এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।”

বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইএ, যার মধ্যে শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও রয়েছে বলে তাদের দাবি।

গত ৮ নভেম্বর সাজিদকে কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর বলা হয়, ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জেএমবির কমান্ডার। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দায়, এলাকার মানুষ তাকে চেনে মাসুম নামে।

গত ১১ নভেম্বর ওই এলাকা থেকে মাসুমের এক ভাইকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে, যদিও সাজিদই মাসুম কি-না সে বিষয়ে তখনো নিশ্চিত ছিল না পুলিশ।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এনআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার সাজিদই যে নারায়ণগঞ্জের মাসুম সে বিষয়েও পুলিশ এখন ‘অনেকটা নিশ্চিত’।

“আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আমরা অনেকটা নিশ্চিত। এর আগে ২০০৫ ও ২০১২ সালে দুই বার সে মাসুম নামে গ্রেপ্তার হয়েছিল।”

জঙ্গি অর্থায়নে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, এ বিষয়ে এনআইএর তদন্ত এখনো ‘প্রাথমিক পর্যায়ে’। তারা এখনো কোনো ‘সিদ্ধান্তে’ পৌঁছাতে পারেননি।

দুই দেশের বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “গতকাল তারা কিছু নাম দিয়েছে। তথ্যের আদান প্রদান হয়েছে। সেই ওয়ার্কিং লেভেলেরই আরেকটি বৈঠক হয়েছে আজ।

পুলিশ সদরদপ্তরে বেলা আড়াইটা থেকে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের কমিটির সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই বৈঠকে এনআইএ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থার মহাপরিচালক শারদ কুমার।

মনিরুল জানান, এনআইএ কর্মকর্তারা বুধবার ফিরে যাবেন। তারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদেরও ভারতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।