শফিউল হত্যার পেছনে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ?

আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে একটি ফেইসবুক পৃষ্ঠায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করা হয়েছে, যে পৃষ্ঠাটি খোলা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের ঘণ্টা পাঁচেক পর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2014, 04:10 AM
Updated : 16 Nov 2014, 07:19 PM

এতে বলা হয়েছে,“আমাদের মুজাহিদীনরা আজকে রাজশাহীতে এক মুরতাদকে কতল করেছেন যে তার ডিপার্টমেন্টে ও ক্লাসে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছিল। ”

আর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ ওই পৃষ্ঠায় নিজেদের পরিচয়ে বলেছে, “উই আর দি হেল্পারস অব শরিয়া ইন বাংলাদেশ। উই আর মুজাহিদিন সাবিলিল্লাহ।”

তবে এ নামে বাংলাদেশে কোনো সংগঠনের কার্যক্রম আছে কি না- সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ। নজর অন্য দিকে সরিয়ে দিতে এই পেইজ খুলে এভাবে দায় স্বীকার করা হচ্ছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।  

ওই পোস্টে কালো পশ্চাদপটে শফিউল ইসলামের ছবি দিয়ে তার ওপর লাল রঙে আড়াআড়ি ‘ক্রস’  চিহ্ন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে।

ছবির নিচে লেখা হয়েছে-  এ কে এম শফিউল ইসলাম (ফাইল ক্লোজড)/ অপরাধ এপ্রিল ২০১০/ শাস্তি প্রদান  নভেম্বর ২০১৪।

এরপর ইংরেজিতে লেখা হয়েছে- “উই ডোন্ট ফরগেট। ইনশাআল্লাহ উই উইল নট ফরগেট আদারস।”

এই ‘অন্যরা’ কারা, তাদের নাম পৃষ্ঠার শুরুতেই তুলে দেয়া হয়েছে। ফেইসবুক পৃষ্ঠার কভার ফটোতে মোট পাঁচটি ছবি দিয়ে তিনটি লাল রঙে আড়াআড়ি ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে।

নিচের সারিতে ব্লগার রাজীব হায়দার, আশরাফুল আলম ও শফিউল ইসলামের ছবি লাল কালিতে কেটে দিয়ে নিচে লেখা হয়েছে ‘খতম’।

আর ওপরের দুটি ছবিতে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও রাকিব মামুনের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে ‘প্রথম প্রচেষ্টা: সমাপ্ত, দ্বিতীয় প্রচেষ্টা: আসছে...!’

এ পৃষ্ঠায় হুমকি দেওয়া হয়েছে- “ইসলাম বিরোধী সকল নাস্তিক-মুরতাদ সাবধান !!!”

এই পৃষ্ঠায় হাতে গোনা যে কটি পোস্ট আছে তার মধ্যে কয়েকটিতে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদনের বরাত দেওয়া হয়েছে।  

একটি পোস্টে লেখা হয়েছে “সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি থাকার সময় অধ্যাপক শফিউল ইসলাম দাড়ি কাটা এবং পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তে শিক্ষক নিয়োগ করে। বোরকা পরে ছাত্রীদের ক্লাসে আসা নিষিদ্ধ করে। এতে অনেক ছাত্রীকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বোরকা ছাড়তে হয়েছে।”

আনসার আল-ইসলাম ইরাক ও সিরিয়ার সক্রিয় একটি ইসলামী জঙ্গি সংগঠন, যারা সালাফি মতাদর্শের অনুসারী এবং শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।  

আনসার-আল-ইসলাম নামে বাংলায় একটি ফেইসবুক পৃষ্ঠার খোঁজ পাওয়া যায় যেটি খোলা হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর।

আর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামের ফেইসবুক পৃষ্ঠাটি খোলা হয়েছে শনিবার রাত ৮টার আশেপাশে কোনো এক সময়ে।

এর আগে বিকাল ৩টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে (৪৮) ক্যাম্পাস সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকার বাসায় ফেরার পথে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকের ওই বিষয়টি আমরাও দেখেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যারা জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করছেন তাদের মধ্যে উপ কমিশনার পদমর্যাদার একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই নামের কোনো সংগঠনের কথা আমাদের জানা নাই। তবে প্রায়ই নতুন নতুন সংগঠন তৈরি হচ্ছে। সুতরাং আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ নামে কোনো সংগঠন  যে তৈরি হয়নি, তা বলা যাচ্ছে না।”

ওসি আলমগীর জানান, হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা বিহাস পল্লীর আশেপাশে অভিযান চালিয়ে সন্দেহবশত তারা দুই জনকে আটক করেছেন। তবে তাদের নাম পরিচয় জানাননি ওসি। 

গাইবান্ধার বাসিন্দা অধ্যাপক শফিউল ইসলাম লিলন বাউল সাধক লালনের ভক্ত ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েন।