জাতির জনক নন, মুজিব শাসক শ্রেণির পিতা: বদরুদ্দীন উমর

শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জনক নন, বাংলাদেশের ‘শাসক শ্রেণির পিতা’ বলে মন্তব্য করেছেন বাম রাজনীতিবিদ ও লেখক বদরুদ্দীন উমর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2014, 03:57 PM
Updated : 14 Nov 2014, 03:57 PM

বাম রাজনীতিক নুরুল হুদা মির্জার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সভায় তিনি বলেন, “দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য শ্রেণি চরিত্রই দায়ী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যাদের কোনো সস্পদ ছিল না তারা দেশের সম্পদ দখল করেছে, লুটপাট করেছে।”

বি্এনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে উমর বলেন, “শেখ মুজিব প্রকৃতপক্ষে ফাদার অব দ্য নেশন না হলেও তাকে ফাদার অব রুলিং ক্লাস বলা যায়। কারণ ওই শ্রেণিকে শেখ মুজিবই তৈরি করেছে।”

আলোচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন তিনি।

বামপন্থী এই লেখক বলেন, “এখন র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিএনপি কথা বলছে। এটি তাদের সময় গঠন করা হয়েছে। তখনও র‌্যাবের হাতে মানুষ হত্যা হয়েছে। ওই সময়ের হত্যা হলে বলা হতো হার্টফেল করেছে।

“আর এখন আওয়ামী লীগ র‌্যাব মোটাতাজা করে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গুম করে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। পার্থক্য একটাই আগে হার্টফেলে হত্যা হত, এখন গুম করে হত্যা হচ্ছে।”

বর্তমানে মেধাবীরা ছাত্র রাজনীতিতে আসছে না বলে মনে করেন বাম তাত্ত্বিক বলে পরিচিত বদরুদ্দীন উমর।

“এখন রাজনীতিতে কোনো ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া শিক্ষার্থীরা আসে না। অথচ পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমলে সব ভালো ছাত্ররা রাজনীতিতে আসত, ভালো ছাত্ররা বাম রাজনীতি করত,” বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের মিটিংয়ে সরকারি চাকরি বিষয়ে যেভাবে উপদেষ্টা বললেন তাতে কী বুঝা যায়? ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ চাকরি পাবে না। যারা গুণ্ডামি করে বেড়ায়, পড়ালেখা করে না, তারাই ছাত্রলীগ করে। তাই দেখা যাবে, আজ প্রশাসন বলুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যায় বলুন, ভালো ছাত্র-ছাত্রী উধাও হয়ে যাচ্ছে।”

যুদ্ধাপরাধের সর্বো্চ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, “কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে শাহবাগে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল একটি প্রজন্মের স্ফূলিঙ্গের পূর্বাভাসের মত। কিন্তু কী দেখা গেল? 

“তিন দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এই গণজাগরণ মঞ্চ কৌশলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেল। তাদের সাংস্কৃতিক জোটকে দাঁড় করিয়ে দিল। বিরানির প্যাকেট সরবরাহ করতে শুরু করল। সেখানে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হল। এভাবে নতুন প্রজন্মের একটি জাগরণকে ক্ষমতাসীনরা শ্রেণির আবর্তে নিয়ন্ত্রণে নিল।”

প্রয়াত নুরুল হুদার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমাজের পরিবর্তন আসেনি। সমাজতন্ত্রের ধারার বিজয় না হলে এই পরিবর্তন আসবে না।

“নুরুল হুদা মির্জা কাদের বকস বুঝেছিলেন, জাতীয়তাবাদের রাজনীতি দিয়ে এ দেশের সমাজের পরিবর্তন আসবে না। এজন্য সমাজতন্ত্রীদের এগিয়ে আসতে হবে।”

যুক্তফ্রন্টে বামপন্থীদের ব্যর্থতা ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী থেকে বামপন্থীদের আলাদা হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “যুক্তফ্রন্টে যদি ভাসানীর অধীনে বামরা থাকত তাহলে তাদেরই বিজয় হত।

“১৯৫৪ সালে বামদের এটা বড় ব্যর্থতা ছিল। ১৯৬৯ সালেও কমরেড আবদুল খালেক, কমরেড তোহার মত বামরা ভাসানীকে ত্যাগ করে চলে যায়, এটাও তাদের ভুল ছিল। কারণ ১৯৬৯ সালেই ভাসানী প্রথম স্বাধীনতার কথা বলেছেন।”

নুরুল হুদার জীবনাদর্শ নতুনদের অনুসরণের আহ্বান জানান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

নুরুল হুদার স্মৃতিচারণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও ষাটের দশকের চীনপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “তিনি সম্পর্কে আমার চাচা। আমি ছটু চাচা বলে ডাকতাম। তার কাছেই আমার শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি। আমি সব সময় দেখেছি, কিভাবে সমাজ পরিবর্তন করা যায়- কৃষক, তাঁতীসহ শোষিত মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়েই তিনি সব সময় ভাবতেন।

“ছটু চাচা প্রায়ই্ আমাকে বলতেন, এদেশের তরুণরা কোথায়? তারা কেন জেগে উঠছে না? আজ দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। এই সময়ে ছটু সাহেবের মতো মানুষের বড় প্রয়োজন ছিল।”

ফখরুলের বাবা মির্জা রুহুল আমিন চখা মিয়া সামরিক শাসক এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভগ্নিপতি ১৯৯৬-১৯৯৭ সময়কার সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেঃ জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য চীনপন্থী কমিউনিস্ট বলে পরিচিত হায়দার আকবর খান রনো, প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, লেখক ও চীনপন্থী বাম তাত্ত্বিক বলে পরিচিত মহসিন শস্ত্রপানি, এহসানুল কবির, প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।