৭ খুনের অনুসন্ধান থেকে সিআইডি বাদ

অবশেষে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের অনুসন্ধান থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বাদ দিল সর্বোচ্চ আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2014, 07:07 AM
Updated : 11 Nov 2014, 11:48 AM

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয় বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

একদিন আগে আদেশ হলেও বিষয়টি জানাজানি হয় মঙ্গলবার।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি সংস্থা একইসঙ্গে সমান্তরালভাবে একটি ঘটনার তদন্ত করতে পারে না- এই যুক্তি দেখিয়ে গত ৫ মে হাই কোর্টে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

সাত খুনের ঘটনায় সিআইডির তদন্ত বন্ধের ওই আবেদন নাকচ করে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ গত জুলাই মাসে আগের আদেশে সামান্য পরিবর্তন আনে। নতুন আদেশে সিআইডিকে ‘ইনভেস্টিগেশন’ এর পরিবর্তে ‘ইনকয়ারি’ করতে বলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে এ বিষয়ে তাদের দুটি আবেদনের নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ সিআইডিকে তদন্ত থেকে বাদ দেয়।

আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক তার সঙ্গে ছিলেন।

নাজমুল হক বলেন, “আপিল বিভাগ আমাদের আবেদন নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দিয়েছে। হাই কোর্টের আদেশে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। হাই কোর্টের এসব বক্তব্য আপিল বিভাগ অ্যাক্সপাঞ্জ করে দিয়েছে।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা তদন্তের থাকলেও এক স্বপ্রণোদিত আদেশে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকেও (সিআইডি) এই তদন্তের দায়িত্ব দেয়। বলা হয়, মূল তদন্ত ডিবিই করবে, সিআইডি করবে ছায়া তদন্ত।

এছাড়া হাই কোর্টের আদেশে সাত খুনের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের ‘সার্বিক তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়, যারা সোমবার আদালতে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার আরেকটি অগ্রগতি প্রতিবেদন হাই কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে হাই কোর্টে শুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।

সার্বিক তদন্ত কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রগতি প্রতিবেদনে আমরা চার সপ্তাহ সময় চেয়েছি। এই সময় পেলে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।”

তিনি বলেন, “আমরা সর্বমোট ৩৭৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছি। এখন তাদের বক্তব্য সমন্বয় করছি। ”

নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করতে বলা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লা নেতৃত্বাধীন এই কমিটিকে। 

অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।

আর র‌্যাব ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্ত করছে।

র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এর আগে ঘটনার তদন্তের দিকে মোড় নিলে আদালত ইতোপূর্বে এই বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিল।

অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।

শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন।