সেই রিভিউ ‘জটিলতা’

যুদ্ধাপরাধের আগের দুটি মামলার চূড়ান্ত রায়ের পর ‘রিভিউয়ের সুযোগ’ নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল তৃতীয় রায়ের পরও সামনে এখন সেই জটিলতা।

সুলায়মান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2014, 08:05 AM
Updated : 3 Nov 2014, 10:51 AM

সোমবার যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিভিউর সুযোগ না থাকার কথা বলা হলেও আসামিপক্ষ বলছে তারা আবেদন করবেন।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “রিভিউ করার আর কোনো সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি না। এর আগে কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রিভিউ করেছিল, তা খারিজ করে দেয় আদালত। এক্ষেত্রে রিভিউয়ের আর কোনো স্কোপ নেই।”

সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আসামিপক্ষ রিভিউ করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তাও নাকচ করে দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “বিশেষ আইনে এ বিচার হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে এ আইন প্রটেকটেড। ১০৫ আর্টিকেল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেছিলাম, এখনও তা বলছি। কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, আর রিভিউ চলবে না। রায় পাওয়ার পর বাস্তবায়ন পর্যন্ত মাঝের সময়টি জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের বিষয়।”

তিনি জানান, আসামিপক্ষের নানা ধরনের আবেদন থাকতে পারে। এসব আবেদনের কিছু আইনি ভিত্তি থাকতেও পারে, নাও পারে।

অবশ্য রিভিউকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে অভিহিত করে আবেদন করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “রিভিউ সাংবিধানিক অধিকার। সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- রিভিউ মেনটেইনেবল না। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও রিভিউ করা হয়েছিল। সুতরাং রিভিউ নিষ্পত্তি করতে হবে। মেরিটেবল না হলে রিভিউ খারিজ হতে পারে।”

‘রিভিউয়ের সুযোগ না দিয়ে’ রায় কার্যকর করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রিভিউ নিয়ে প্রথম জটিলতা দেখা দেয় আপিল বিভাগ ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে রায় প্রকাশ করলে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের সুযোগ চান কাদের মোল্লা। পাশাপাশি রায় রিভিউ করে খালাসও চান তিনি।

ওই আবেদনের কারণে সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও নাটকীয়ভাবে পিছিয়ে যায় কাদের মোল্লার ফাঁসি। দুই দিন শুনানির পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর উভয় আবেদন একত্রে খারিজ হয়ে যায়।

ওই শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের মূল যুক্তি ছিল, বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারে আপিলেরই সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশে সে সুযোগ রাখা হয়েছে, তাই তারা আপিলের সুযোগ পেয়েছেন। তবে যেহেতু যুদ্ধাপরাধ আইনের মামলার রিভিউয়ের কোনো কথা বলা হয়নি, তাই এই ধরনের মামলায় রিভিউয়েরও সুযোগ নেই।

পাল্টা যুক্তি দিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অন্য সাধারণ মামলার আসামিদের মতো রিভিউকে আসামির অধিকার হিসাবে তুলে ধরেন।

এ নিয়ে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার পক্ষে করা দুটি আবেদনই একসঙ্গে খারিজ করে দেয়। পরে ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর করা হয় ফাঁসির দণ্ড।

কাদের মোল্লার মামলায় রিভিউ গ্রহণ ও খালাসের আবেদন একত্রে খারিজ হওয়ায় এ ধরনের মামলায় রিভিউ চলবে কি-না, সে অস্পষ্টতা এবারও দেখা দিয়েছে কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়ের পর।

সাধারণ মামলায় আপিল বিভাগের রায় হয়ে যাওয়ার পর কোনোপক্ষ নতুন কোনো ভিত্তি খুঁজে পেলে আপিল বিভাগে রিভিউয়ের আবেদন করার সুযোগ পান।