জামায়াতের রাজনীতি করে ধনকুবের মীর কাসেম

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রচারণার অর্থ জোগানদাতা বলে পরিচিত মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলতেই হল।

মিন্টু চৌধুরীও শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2014, 05:19 PM
Updated : 3 Sept 2016, 06:38 PM

যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এই জামায়াতে ইসলামী নেতা আইনি লড়াইয়ের সর্বোচ্চ ধাপ পেরিয়েও বিচার ঠেকাতে পারলেন না।

তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন ৩০ অগাস্ট খারিজ হয়ে যায়। সব বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে কার্যকর করা হয় এই যুদ্ধাপরাধীর প্রাণদণ্ড।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেম জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শুরার সদস্য, যে দলটির অর্থ জোগানদাতা হিসেবেই তিনি পরিচিত।

একাত্তরে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নির্যাতন কেন্দ্রের পরিচালক মিন্টু হিসেবে যাকে চিনত চট্টগ্রামবাসী, ১৯৭৭ সালে সেই মীর কাসেমকে দেখা গিয়েছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে।

মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, “ডালিম হোটেলে ঘটে যাওয়া সব ধরনের অপরাধের ব্যাপারে সবকিছুই জানতেন মীর কাসেম। এসব অপরাধে তার কর্তৃত্বপূর্ণ অংশগ্রহণও প্রমাণিত।”

ডালিম হোটেলে নির্যাতনের ‘কৃতিত্বের’ প্রেক্ষাপটে একাত্তরের শেষ দিকে ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল মীর কাসেমকে। স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন করে আবার ছাত্র সংগঠনের যাত্রা শুরুতে তার ওপরই ভরসা করতে দেখা যায় জামায়াত নেতৃত্বকে।

ছাত্র সংঘের উত্তরসূরী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে ছাত্র শিবিরের যাত্রা শুরু করে দিয়ে পরে জামায়াতের নেতৃত্বে আসেন মীর কাসেম; সেই সঙ্গে নামেন ব্যবসায়।

এনজিও দিয়ে শুরুর পর ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আমদানি-রপ্তানি, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ উৎপাদন, শিপিং বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটান এই জামায়াত নেতা। এই যাত্রাপথে তিনি বিভিন্ন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও পান।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর একে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কিত করতে বিভিন্ন প্রয়াস দেখা যায়, যাতে জামায়াতের হয়ে মীর কাসেম অর্থ ঢেলেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকেই অভিযোগ আসে।

২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই চুক্তির কপি এবং টাকা দেওয়ার রসিদ রয়েছে সরকারের কাছে।

আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, টাকা থাকলেই যে আইনের হাত থেকে, বিচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না, মীর কাসেম আলীর মামলার বিচারের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হয়েছে।

মীর কাসেম যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন- সেই অভিযোগের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে এ মামলার আপিল শুনানিতে একটি মেমো দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওয়াশিংটনের ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ওই মেমোতে বলা হয়, তারা ‘পেশাগত সেবার’ জন্য মীর কাসেমের পাঠানো আড়াই কোটি ডলার হাতে পেয়েছে।

ওই শুনানিতে আদালত বলে, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির ২০১২ সালের ৯ জুন দাখিল করা জামিন আবেদনের সমর্থনেও আর্থিক স্বচ্ছলতার তথ্যাদি দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের রেকর্ডে উল্লেখ করা হয়, তিনি (মীর কাসেম) একজন ‘সফল ব্যবসায়ী’।

“এসব প্রমাণিত সিদ্ধান্ত থেকে উপসংহার টানা যায় যে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন।”

এ মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর সে প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, “আদালত বলেছেন, তিনি (মীর কাসেম) লবিস্ট নিয়োগ করেছে কি করেন নাই- এটা প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে ২৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ব্যাপারে যে রসিদ দিয়েছিলাম, তা আদালত বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন, মীর কাসেম আলী খুবই প্রতাপশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি বিচারকে ফ্রাস্টেট করে এটাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।”

জামায়াতের নিয়োগ দেওয়া ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে পশ্চিমা দুনিয়ায় তৎপরতা চালান, যাকে মীর কাসেমকে নিয়েও তৎপর থাকতে দেখা যায়। এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে তিনি লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনও করেন।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ থেকে মীর কাসেমের নাম সরানো হলেও ট্রাইব্যুনালের রায়ের সময়ও ইসলামী ব্যাংকের ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৪টি শেয়ারের মালিক ছিলেন তিনি।

মীর কাসেম আলী

গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য ছিলেন মীর কাসেম। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই ট্রাস্টের অধীনে।

মীর কাসেম ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। এর অধীনে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউট, ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইসলামী ব্যাংক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামী ব্যাংক মহিলা মাদ্রাসা, ইসলামী ব্যাংক ফোরকানিয়া মক্তব, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারেরও সদস্য ছিলেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে ভাইস-চেয়ারম্যান হন তিনি। পরে ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবেও ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন।

মীর কাসেম পরে গণমাধ্যমের ব্যবসায় ঢোকেন; দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন গড়ে তুলে এর চেয়ারম্যান হন। ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন। ২০১৩ সালে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের অবস্থান নিয়ে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে দিগন্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কেয়ারী লিমিটেড, কেয়ারী ষ্প্রিং লিমিটেড, কেয়ারী রিয়েল এস্টেট, কেয়ারী শান লিমিটেড, কেয়ারী তাজ লিমিটেড, কেয়ারী কালার সেন্টার লিমিটেড, কেয়ারী ঝর্ণা লিমিটেড, কেয়ারী টেলিকম লিমিটেড, কেয়ারী পোলট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড প্রসেস, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসসহ এই নামের ১০টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ছিল এই জামায়াত নেতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে।

এছাড়া কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যে চলাচলকারী কেয়ারী নামের পাঁচটি বিলাসবহুল নৌযানের মালিক ছিলেন মীর কাসেম। তিনি ইডেন শিপিং লাইনসের চেয়ারম্যান ছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সাহায্যপুষ্ট রাবেতা আলম আল-ইসলামী নামের এনজিও’র এক সময়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর এই মীর কাসেম। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নামে সাহায্যের টাকা এনে জঙ্গি প্রশিক্ষণে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবের তথ্য সংগ্রহ করে সন্দেহজনক লেনদেনের আলামত পায়। ওই সময় বাংলাদেশে রাবেতার সহায়তায় পরিচালিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। 

১৯৮০ সালে মীর কাসেম যখন ইসলামী ছাত্রশিবির হয়ে জামায়াতে যোগ দেন, তখন রাবেতা আলম আল-ইসলামীর সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। তিন বছর পর ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় ভাইস চেয়ারম্যান হওয়া মীর কাসেম এরপরই বিভিন্ন খাতে ব্যবসা বাড়াতে থাকেন।

এই বিশাল ‘বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য’ সৃষ্টিতে মীর কাসেম বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি করেছেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গোলাম আযম, মীর কাসেম সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রচারণা চালায় যে বাংলাদেশে ভারতীয়রা এবং ভারতীয়দের এজেন্টরা মসজিদ, মাদ্রাসা ভেঙে ফেলেছে। তাদের দলের সদস্যদের মেরে ফেলেছে।

“বাংলাদেশে মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ ও দলীয় সদস্যদের পরিবারের পুনর্বাসনের কথা বলে জামায়াতে ইসলামী মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে। ওইসব অর্থ দিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক গঠন করে তারা। এই সব অর্থের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল মীর কাসেম।”

যুদ্ধাপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর কারাগারে যাওয়ার প্রিজন ভ্যানে উঠতে গিয়ে `ভি' চিহ্ন দেখিয়েছিলেন মীর কাসেম আলী

বাণিজ্যক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়া মীর কাসেম দলে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯৮৫ সালে মজলিসে শুরার সদস্য হন।

মীর কাসেমের জন্ম ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামে। বাবা তৈয়ব আলী ছিলেন চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। সেই সূত্রে মীর কাসেমের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।   

গত শতকের ষাটের দশকে কাসেম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী, ১৯৬৭ সালে ওই স্কুল থেকেই তিনি মেট্রিক পাস করেন।

পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে থাকা মীর কাসেমকে পিয়ারু ও মিন্টু নামে চিনতেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর সেখানেই স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন কাসেম, পরের বছর জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন। স্বাধিকারের দাবিতে বাঙালির সংগ্রাম তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারা দেশে বাঙালি নিধন শুরু করলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে নেয় এ দেশের মানুষ। ওই বছর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন এবং সেই সূত্রে ছিলেন চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনীর নেতা।

৭ নভেম্বর দলে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন।

তখন সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন আলী আহসান মো. মুজাহিদ। মতিউর রহমান নিজামীর পর মুজাহিদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় কাসেমের আগেই।

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসাবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে উঠে এসেছে। 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর মীর কাসেম আত্মগোপনে যান। ১৯৭৪ সালে ঢাকার আইডিয়াল কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নথিপত্রে দেখা যায়।

স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রশিবির যাত্রা শুরু করলে তার সভাপতি হন মীর কাসেম।

তারপর ঘটতে থাকে মীর কাসেমের উত্থান, যা তাকে এতটাই উদ্ধত করেছিল যে রায়ের পরপরই জামায়াত নেতার প্রতিক্রিয়ায় তার প্রকাশ ঘটে।

ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠেন- “শয়তান ...শয়তান। মিথ্যা ঘটনা... মিথ্যা সাক্ষ্য... কালো আইন... ফরমায়েশি রায়।”