গোলাম আযমের লাশ হস্তান্তর

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধিতার প্রতীক গোলাম আযমের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2014, 03:17 AM
Updated : 24 Oct 2014, 06:17 AM

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এই আমির  সাজা ভোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯২ বছর বয়সী গোলাম আযমের  আরও ৮৯ বছর কারাভোগ বাকি ছিল।

রাতেই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে ঢাকার জেলার মো. নেছার আলম জানিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা তার লাশ মগবাজারের বাসায় নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারাধীন অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)  হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের আমির গোলাম আযম। গত বছরের ১৫ জুলাই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পরও এখানেই ছিলেন তিনি।

গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেছিলেন, আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি পাওনা হলেও বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হল।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের তখনকার আমিরকে।

তার তার জন্য যে শাস্তি তাকে দেওয়া হয়, তা এক বছর তিন মাস খেটেই মারা গেলেন তিনি। জীবদ্দশায় যিনি একাত্তরের বাঙালিদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য কখনও ক্ষমা কিংবা দুঃখ প্রকাশও করেননি।

গোলাম আযমকে মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তার ছেলে আব্দুল্লাহিল আজমী জানিয়েছেন। তবে তার অন্য ছেলেরা দেশে ফিরলে কয়েকদিন পর তা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।  সেই পর্যন্ত এই যুদ্ধাপরাধীর লাশ থাকবে হিমঘরে।

১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নানাবাড়িতে জন্ম নেওয়া গোলাম আযমের পৈত্রিক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরগাঁওয়ে।

ঢাকার ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (এখনকার কবি নজরুল কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি।

গত শতকের ’৪০ এর দশকে এক মেয়াদে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন গোলাম আযম। ওই সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জিএস হিসেবে তার একটি স্মারকলিপি দেওয়াকে ‘ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা’ হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস চালায় তার দল জামায়াতে ইসলামী; যদিও পরে তিনি নিজেই তার ওই পদক্ষেপ ভুল ছিল বলে উল্লেখ করেন।

ছাত্রজীবন শেষে ১৯৫০ থেকে পাঁচবছর রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ান গোলাম আযম। ওই সময়ই সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন তিনি।

ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল মওদুদীকে, আর তার শিষ্য গোলাম আযমও একই অপরাধ করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়।

১৯৬৯ সালে গোলাম আযম যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির হন, বাংলার মানুষের স্বাধিকারের আন্দোলন তখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম। এসব আধা সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালান এই জামায়াত নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যান গোলাম আযম। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যে।

৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা; তা-ও পাকিস্তানি পাসপোর্টে।

যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে গোলাম আযমের আগে শাস্তি ভোগের সময় মৃত্যু হয় আব্দুল আলীমের। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার মামলারও কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়।