‘ফ্রেমবন্দি বাংলাদেশ’

আট বছর পূর্তিতে ভিন্ন মেজাজের এক আয়োজন নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি হচ্ছে দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ঘটনাবহুল আটটি বছর তারা ফিরিয়ে আনছে আলোকচিত্রের ফ্রেমে।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2014, 08:24 AM
Updated : 23 Oct 2014, 05:14 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আট আলোকচিত্র সাংবাদিকের তোলা নির্বাচিত ছবি নিয়ে ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবর গুলশানের র‌্যাডিয়াস আর্ট গ্যালারিতে (বে’স গ্যালারিয়া) চলবে এ প্রদর্শনী, যার শিরোনাম ‘ক্যাপচারিং বাংলাদেশ’।

প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “ইন্টারনেট সংবাদপত্র হিসেবে গত আট বছরে ফটো সাংবাদিকতায় আমরা যে কাজগুলো করার চেষ্টা করেছি- তা প্রদর্শনের জন্যই এ আয়োজন। এ প্রদর্শনী ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে গত আট বছরের ওপর একটি চকিত আলোকপাত।”

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ উপলক্ষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশিত বিশেষ সাময়িকী ‘আনন্দপাঠ’-এর মোড়কও উন্মোচন করবেন তিনি।  

একই দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্র বিষয়ক নতুন ওয়েবসাইট click.bdnews24.com এর উদ্বোধন করবেন দেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম। তার সঙ্গে থাকবেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রদর্শনী নিবেদন করা হচ্ছে সদ্য প্রয়াত ইতিহাসবিদ এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহমদের স্মৃতির উদ্দেশে, এ আয়োজন যার উদ্বোধন করার কথা ছিল।

“কথা ছিল প্রতি বছরের মতো এবারো অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আসবেন। তারই এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করার কথা ছিল। তার নামাঙ্কিত আমন্ত্রণপত্রও অতিথিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হঠাৎই চলে গেলেন।” 

৭৭ বছর বয়সী আলোকচিত্রী সাইদা খানম প্রয়াত এই জাতীয় অধ্যাপকের স্ত্রীর ছোট বোন।

প্রদর্শনীর কিউরেটর অনিন্দ্য রহমান জানান, সালাহ্উদ্দীন আহমদের স্মরণে ‘ক্যাপচারিং বাংলাদেশ’-এ একটি ‘কর্নার’ থাকছে, যেখানে প্রয়াত এই অধ্যাপকের বিভিন্ন আলোকচিত্র স্থান পাবে। 

“বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে এবং ঐতিহাসিক ও সামাজিক গুরুত্ব বহন করে- এমন অসংখ্য ছবির মধ্য থেকে বাছাই করে আট আলোকচিত্রীর তোলা ৭০টি আলোকচিত্র নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন। এছাড়া দর্শনার্থীরা একটি ডিজিটাল প্রদর্শনীও দেখতে পাবেন, যেখানে থাকছে প্রায় এক হাজার আলোকচিত্র।”

২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী ।

click.bdnews24.com এর সম্পাদক হাসান বিপুল বলেন, “প্রদর্শনীর সব আলোকচিত্রই যে ‘নিউজ ফটোগ্রাফি’- তা নয়। কিছু আলোকচিত্র রয়েছে যেগুলো তোলার সময় ছিল গুরুত্বপূর্ণ খবরের অংশ, এখন হয়তো মানুষের স্মৃতিতে ততোটা নেই।”

উদাহরণ হিসাবে বিপুল ‘বার্ডস আই ভিউতে’ তোলা বিজয় সরণী ও সংসদ ভবন এলাকার একটি আলোকচিত্রের কথা বলেন, যার সঙ্গে ওই এলাকার এখনকার দৃশ্যপটের খুব একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওই ছবিটি তোলা হয়েছিল ২১ তলা র‌্যাংগস ভবন থেকে, যে স্থাপনাটি আদালতের আদেশে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ভেঙে ফেলে রাস্তা তৈরি করা হয়।

“আমাদের জীবনযাত্রা, রাজনীতি প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। তারই একটি প্রতিচ্ছবি দর্শকরা এ প্রদর্শনীতে পাবেন।”

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “সাধারণত প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জমকালো আয়োজন থাকে। এবার আমরা অনুষ্ঠানের আদল বদলেছি। বড় অনুষ্ঠান বলতে যা বোঝায় সে রকম অনুষ্ঠান এবার হচ্ছে না। তবে একে ক্ষুদ্র আয়োজনও বলা যাবে না।

তিনি বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখছে অনেক বোদ্ধা তার প্রশংসা করেছেন। এবারের আয়োজন আমাদের আলোকচিত্রী সাংবাদিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ সাময়িকী ‘আনন্দপাঠ’ এর সাড়ে পাঁচশ পৃষ্ঠায় দুই বাংলার ১৬ জন লেখকের ছোট গল্প, ১১টি অনুবাদ গল্প, চারটি সাক্ষাৎকার এবং দুটি নিবন্ধের সমাবেশ ঘটিয়েছেন এর সম্পাদনা পর্ষদ।

এই স্মরণিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন তার জেল জীবনের স্মৃতিকথা। সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদের লেখায় এসেছে পাঁচ দশক আগের সেই দিনের কথা, যেদিন বান্ধবী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়।  

এছাড়া সাবেক কমিউনিস্ট নেতা মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুনসহ দেড়শ’র বেশি লেখকের বিভিন্ন আঙ্গিকের রচনা মুদ্রিত হয়েছে এই সাময়িকীতে। পঞ্চাশ দশক থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজন্মের কবিদের ৬৬টি কবিতাও এসেছে আনন্দপাঠে।

এতে লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, আসাদ চৌধুরী, মনিরুজ্জামান, রফিক আজাদ, হায়াৎ সাইফ, রবিউল হুসাইন ও নির্মলেন্দু গুণের মতো কবি, লেখক, সাহিত্যিকরা।

প্রয়াত বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও সাবেক ছাত্রনেতা খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক-এর অপ্রকাশিত দুটি লেখাও আনন্দপাঠে এসেছে।

প্রতিষ্ঠার আট বছর

শুরুটা হয়েছিল ২০০৫ সালে। অন্যান্য বার্তা সংস্থার মতো ‘বিডিনিউজ’ তখন সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য খবর সরবরাহ করত। দেশের অন্য সংবাদ সংস্থাগুলো টেলিপ্রিন্টারে খবর সরবরাহ করলেও বিডিনিউজ এ কাজটি শুরু করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

২০০৬ সালে বার্তা সংস্থাটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদলের পর এর খোল-নলচে বদলে যায়। সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নেতৃত্বে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের প্রথম ডটকম কোম্পানির রূপ দেয়। নতুন আঙ্গিকে এর পরিচয় হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে।

২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে অর্থাৎ রাত ১২টা ০১ মিনিটে ওয়েবসাইটটি সব পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র।

গুগল অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২৩৫টি দেশ ও সার্বভৌম অঞ্চলের পাঠকের দৃষ্টি এখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাতায় পৌঁছাচ্ছে।

২০১১ সালে যেখানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে মাসে ২০ লাখের মতো ভিজিট হতো, এখন তা পৌঁছেছে দুই কোটির কাছাকাছি। বর্তমানে প্রতিমাসে ইউনিক ভিজিটর প্রায় ৪০ লাখ। মুদ্রণশিল্পের মানদণ্ড অনুযায়ী ইন্টারনেট পাঠকের এই সংখ্যা ছাপাখানায় প্রকাশিত সব সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যার সমতুল্য।

এই পাঠকেরা মাসে ছয় কোটি বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় চোখ রাখেন।

গত বছর ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘হিট’ ছিল প্রায় ১৭ লাখ, যা এ যাবত কালের সর্বাধিক। ফাঁসির খবর পেতে সেই রাতে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই এ সাইটে আসেন ২ লাখ পাঠক।

সময়ের উদ্ভাবনী মেজাজকে ধারণ করে গত আট বছরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়েছে ‘মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট’। মোবাইল ফোনের জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অ্যাপ ব্যবহার করে চলতি পথেও পাঠক পাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্ন খবর।

সেই সঙ্গে আছে মোবাইল ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউজ অ্যালার্ট সার্ভিস (ব্রেকিং নিউজ), যে সেবায় তারাই বাংলাদেশে পথিকৃৎ।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে থেকেও পাঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সঙ্গে পাচ্ছে সর্বক্ষণ। ২০১১ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যখন পঞ্চম বর্ষপূতি উদযাপন করে, ফেইসবুকে তাদের ফ্যান সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ২৫৭। তিন বছরের মাথায় সেই সংখ্যা পৌঁছে গেছে ২৬ লাখের কাছাকাছি।

ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এই সংখ্যাটি অর্গানিক।