‘জামায়াতগুরুর’ যুদ্ধাপরাধ: আপিল শুনানি ২ ডিসেম্বর

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৯০ বছর দণ্ডের বিরুদ্ধে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের আপিল শুনানির জন্য ২ ডিসেম্বর দিন রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2014, 04:12 AM
Updated : 22 Oct 2014, 07:32 AM

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ বুধবার এই দিন ঠিক করে দেয়।

আদালতে গোলাম আযমের পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অপরাধ বিবেচনায় ‘সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য’ হলেও ‘বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায়’ ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ওই বছরের ৫ অগাস্ট বেকসুর খালাস চেয়ে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম। তবে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের হোতা গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে গত ১২ অগাস্ট আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেয়া- এই পাঁচ ধরনের অপরাধের প্রতিটিই প্রমাণিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর রায়ে বলেন, “তার যে অপরাধ এর সবগুলোই সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তবে গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি আছেন। তার বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এই সাজা দেয়া হয়েছে।”

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম। এসব আধা সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালান এই জামায়াত নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যান গোলাম আযম। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যে।

৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা; নাগরিকত্বও ফিরে পান। ১৯৯৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমিরের পদ থেকে অবসরে গেলেও দলটির তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে সম্পৃক্ততা বজায় রাখেন।

গোলাম আযম ফেরার পর থেকেই একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন এবং ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণ আদালতে প্রতীকী বিচার ও ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি চূড়ান্ত রূপ পায়।

সে সময় ক্ষমতাসীন সরকার সেই দাবিতে সাড়া না দিলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠনের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত সেই বিচার কাজ শুরু হয়।

পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে গোলাম আযমের বিচার শুরু হয় ২০১২ সালের ১৩ মে।

তার এক বছর পর গতবছর জুলাইয়ে ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় ঘোষণা করে। তখন থেকেই তাকে কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে।