ইসির ভাবনায় অনলাইন ভোটিং!

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দরজা না খুললেও এবার শুধু ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য অনলাইন ভোটিংয়ের কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2014, 04:25 AM
Updated : 20 Oct 2014, 04:25 AM

অবশ্য পোস্টাল ব্যালটের পাশাপাশি অনলাইন ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করতে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কমিশন সভায় এখনো বিষয়টি তোলা হয়নি। ইসি সচিবালয়ের আইটি শাখা এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিতে সক্ষম হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

২০১০ সালে এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন স্থানীয় সরকারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইভিএম চালু করে।

তারই ধারাবাহিকতায় পৌরসভায়ও ইভিএমে ভোট হয়। উপজেলায় ইভিএমে ভোট করতে আইন সংশোধন হলেও পরে তা আর করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ পর‌্যায়ে ইভিএম চালুর জন্য আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।

কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি ‘রাজনৈতিক বিরোধিতার’ কথা বলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চালু করেনি। নিকট ভবিষ্যতেও যে তা চালু হবে না- ইসির কথায় তা মোটামুটি স্পষ্ট।

এই অবস্থায় অনলাইন ভোটিংয়ের ‘ভাবনা’ কেন এলো জানতে চাইলে ইসির উপ সচিব আব্দুল অদুদ বলেন, সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যসহ ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রায় লাখ পাঁচেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোট দিতে পারেন না। তাদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা অনেকটাই ‘অকার্যকর’।

“এ অবস্থায় ইসি সচিব [মৌখিকভাবে] ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য বিকল্প কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে বলেন। এ কারণেই পোস্টাল ব্যালটের পাশাপাশি অনলাইন ভোটিং চালুর প্রস্তাবটি এসেছে।”

তবে প্রযুক্তি নির্ভর এ পদ্ধতি চালু করতে হলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সফটওয়্যার উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ বা গণপ্রিতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কারসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে অদুদ বলেন, পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করে ভোট দেওয়ার বিষয়টি যেখানে ‘কার‌্যকর’ প্রমাণিত হয়নি, সেখানে অনলাইন ভোটিং কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে তা আলোচনার বিষয়। ইসি সচিব সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।

নিয়ম অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, কারাবন্দি কিংবা অন্য কেউ এ আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে তার আর ভোট দেওয়া হয় না।

এ ছাড়া নির্বাচনের কমপক্ষে দুই দিন আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালট সরবরাহ করতে হয়, যাতে নির্বাচনের দিন এসব ব্যালট কেন্দ্রে পৌঁছানো যায়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপালনকারী ইসির এক  উপসচিব জানান, সময় স্বল্পতা ও যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করা সম্ভব না হওয়ায় অধিকাংশ কর্মকর্তাই শেষ পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন না।

তিনি জানান, দশম সংসদে ৯ কোটি ২০ লাখের মতো ভোটারের বিপরীতে কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার। সেই হিসাবে ৫ লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর চার লাখের মতো সদস্যের এতে দায়িত্ব পালন করার কথা। তদবে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় ভোট হয় কেবল ১৪৭ আসনে।

এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৫ হাজার ২১৬ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, এক লাখ ৭৭ হাজার ১০৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৩ লাখ ৫৪ হাজার ২১৪ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়ত্ব পালন করেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প পরিসরে অনলাইন ভোটিং চালু এখনো বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি সম্ভব নও হতে পারে।

তিনশ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণের সময় কর্মকর্তাদের একটি অংশ নিজের নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পেলেও কেন্দ্র হয় আলাদা। কর্মকর্তাদের আরেকটি অংশ নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে দায়িত্ব পেলেও জেলার মধ্যেই থাকেন।

এ দুই ধরনের ভোট নেওয়া অনেকটা সহজ বলেই মনে করেন ইসি কর্মকর্তারা। তবে যারা নিজের জেলার বাইরে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব পান তাদের ভোট নেওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমদের বেশিরভাগই এ দলে পড়েন।

ইসির জন্যে তৈরি করা এক খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সংসদের তিনশ আসনের জন্য ব্যালট পেপার অনলাইনে দেওয়া থাকবে। প্রত্যেক সহকারী রিটার্নিং     কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনলাইনে ভোট দেওয়ার জন্য একটি ভোটকেন্দ্র/ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে। এমন ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষের জন্য প্রিসাইডিং অফিসারসহ পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে এবং এ কাজের জন্য ওইসব কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে  প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অনলাইনে ভোট দিতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওই এলাকার ভোটার কিনা- তা যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা থাকবে ওই ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষে।

ভোটের দিনের অন্তত দুদিন আগে ‘সুবিধামতো ও নির্ধারিত’ সময়ে অনলাইনে ভোট দেওয়া যাবে। কমিশনের আইটি উইং এ বিষয়ে যাবতীয় কারিগরি ব্যবস্থা নেবে।

এ পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি নির্বাচন কমিশনাররা।

২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।