‘নিরাপত্তা না পেলে পিয়াসের লাশ শহীদ মিনারে যাবে না’

বিতর্কিত টিভি আলোচক পিয়াস করিমের মরদেহ ‘শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য’ শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখার অনুমতি দেওয়া হবে কি না- সে সিদ্ধান্ত জানায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2014, 07:05 AM
Updated : 15 Oct 2014, 09:02 AM

অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে ‘নিরাপত্তা না পেলে’ শহীদ মিনারে কফিন নেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিয়াসের ভাই লোটাস করিম।

বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা হলো- শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বের করে মরদেহ বাসায় নেওয়া হবে, শুভাকাঙ্খী ও আত্মীয়-স্বজনরা দেখবেন। এরপর বায়তুল মোকাররমে নিয়ে যাব, জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিললে শুক্রবার পিয়াস করিমের কফিন শহীদ মিনারে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান লোটাস। 

তিনি বলেন, এ বিষয়ে পিয়াসের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসীন স্বাক্ষরিত একটি আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

“ভাবির সই করা আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক [আসিফ নজরুলসহ কয়েকজন] এসে নিয়ে গেছেন। লিখিত আবেদনটি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে গতকাল। এখনো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।”

পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দিনব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের প্রতি ‘শেষ শ্রদ্ধা’ জানানোর বিষয়টিও রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম সোমবার মারা যান। তিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

গণজাগরণ আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে। এজন্য গণজাগরণ আন্দোলনকারীরা যুদ্ধাপরাধীদের ‘পক্ষের’ ব্যক্তি হিসেবে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার বিরোধিতা করেছে।

পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে সেখানে ‘পথচিত্র’ অঙ্কন কর্মসূচিও পালন করেছেন একদল চারুশিল্পী।

শহীদ মিনারের উত্তর পাশে সিঁড়ির আগে লেখা ছিল- ‘কোন পাকি দালালের লাশ বইবে না পবিত্র শহীদ মিনার, লাশ নিয়ে যা পাকিস্তান।’ এছাড়া শহীদ মিনারে টানানো একটি ব্যানারে লেখা ছিল- ‘রাজাকার পুত্র পিয়াস করিমের লাশের ভার বইবে না শহীদ মিনার/ রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’।

লোটাস করিম জানান, এই প্রতিবাদের মুখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে তারা পরিকল্পনাটি বাদ দেবেন।

“শহীদ মিনারের বিষয়ে আমরা যদি ওরকম নিরাপত্তা না পাই, আমরা নিয়ে যাব না। আমরা চাই না কোনো রকম অবমাননা হোক।”

এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে পিয়াস করিমের লাশ বুধবার শহীদ মিনারে রাখার কথা বলা হলে বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতেও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, মরদেহ রাখার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর আবেগ-অনুভূতি বিবেচনা করবেন তারা।