শিরীন শারমিন ভোটে জিতে সিপিএ চেয়ারপার্সন

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর পার্লামেন্টগুলোর ফোরামের প্রধান হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের মুকুটে নতুন পালক যোগ করলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2014, 02:21 PM
Updated : 9 Oct 2014, 04:01 PM

বৃহস্পতিবার ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউনদে-তে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ)৬০তম সম্মেলনে সরাসরি ভোটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন তিনি।

মর্যাদাপূর্ণ এই পদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেইম্যান আইল্যান্ডস’র লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির স্পিকার জুলিয়ানা ও’ কনর-কনোলি।

ইয়াউনদে থেকে স্পিকারের একান্ত সচিব মো. কামাল বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন ভোটে জিতে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সিপিএ চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছেন শিরীন শারমিন।

“স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ৭০ ভোট পেয়েছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৬৭ ভোট।”

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিএ সদস্য দেশগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিরীন শারমিন।

“যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং যারা ভোট দেননি তাদেরও সঙ্গে নিয়ে সিপিএ’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের কথা বলেছেন স্পিকার,” বলেন কামাল বিল্লাহ।

বাংলাদেশের কেউ এর আগে এই পদে ছিলেন না। তবে প্রথম বাঙালি হিসেবে এই পদে ২০০৫-০৮ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য হাশিম আব্দুল হালিম। 

এর আগে ১৯৮৪-৮৭ মেয়াদে ভারতের পার্লামেন্ট সদস্য বাল রাম ঝাকার সিপিএ চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সিপিএ’র বর্তমান চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের সদস্য স্যার অ্যালান হ্যাসেলহার্টস।

তার উত্তরসূরির দায়িত্ব নিতে ভোটে অংশ নিতে শিরীন শারমিনকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউজ অব লর্ডসের স্পিকার ব্যারোনেস ডি সুজা।

এই নির্বাচনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ১৭৫টি পার্লামেন্টের ৩২১ জন ভোটার ছিলেন। বাংলাদেশ পার্লামেন্ট ১৯৭৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক এই ফোরামের সদস্য।

নবম সংসদের মাঝপথে শিরীন শারমিনের স্পিকারের দায়িত্বে আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট প্রথম নারী স্পিকার পায়। দশম সংসদেও একই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

শিরীন শারমিনের জন্ম ১৯৬৬ সালে ৬ অক্টোবর ঢাকায়। বাবা রফিকউল্লাহ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব। মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সদস্য ছিলেন।

১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান নিয়ে এসএসসি পাস করেন শিরীন। দুই বছর পর একই বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন।

১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৯০ সালে অবস্থান অটুট রেখেই এলএলএম ডিগ্রি নেন শিরীন শারমিন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি।

শিরীন বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ২০০৮ সালে আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হিসেবে নবম জাতীয় সংসদে আইনসভায় আসেন শিরীন শারমিন। স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর নবম সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আইনসভার মেয়াদের আট মাস বাকি থাকতে স্পিকার হন শিরীন শারমিন।

দশম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া রংপুরের পীরগঞ্জ আসনে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।