লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে তলব

হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাতটি মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে, যার মধ্যে পাঁচটিতে তাকে তলব করেছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 05:51 AM
Updated : 1 Oct 2014, 12:26 PM

ঢাকার দুটি মামলায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে আগামী ২৮ ও ৩০ অক্টোবর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

আর চট্টগ্রামের তিন মামলায় তাকে আদালতে হাজির হতে হবে  আগামী ২৩ অক্টোবর।

এছাড়া বরিশালেও একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যাতে বাদীর বক্তব্য শুনে বিচারক আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

রোববার যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্য নিয়ে গত তিন দিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

গত রোববার নিউ ইয়র্কে স্থানীয় টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”

তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

ওই ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, “এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নাই। কোনো প্রডাকশন নাই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।”

এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মন্ত্রিসভা ও সংসদ থেকে লতিফকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও।   

লতিফ সিদ্দিকীকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে ২৬ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করার ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ।

ঢাকায় দুই মামলা

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ঢাকা মেট্রোপলিটান আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এএমএম আবেদ রাজা এবং মো. বাদল মিয়া নামে পূর্ব ইসলামবাগের এক চামড়া ব্যবসায়ী বুধবার সকালে ঢাকার হাকিম আদালতে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন।

তাদের বক্তব্য শুনে মামলা আমলে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের দুই বিচারক।

আবেদ রাজার মামলার শুনানি হয় মহানগর হাকিম মিজানুর রহমানের আদালতে। তিনি মামলা আমলে নিয়ে ২৮ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বলে এ আদালতের পেশকার সায়েম চৌধুরী জানান।

আর বাদল মিয়ার মামলা শোনেন মহানগর হাকিম রেজাউল করিম। তিনি ৩০ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে হাজির হতে সমন জারির নির্দেশ দেন বলে এ আদালতের পেশকার নুরুল ইসলাম জানান।

বাদল মিয়ার আইনজীবী গাজী মোস্তফা কামাল জানান, দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় করা মামলায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আর আবেদ রাজার মামলাটি করা হয়েছে দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ও ২৯৮ ধারায়। দুটি ধারাই জামিনযোগ্য।

দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের অমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক কোনো কাজ করলে দুই বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। 

আর দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক শব্দ উচ্চারণ করলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে। 

আবেদ রাজার মামলায় দুই ধারাই রয়েছে। আর মো. বাদলের মামলায় শুধুমাত্র ২৯৫ ধারাল অভিযোগ আনা হয়েছে।

চট্টগ্রামে ৩ মামলা

কাওসার পারভীন, আবদুস ছত্তার ও ইফতেখার মহসিন নামে বিএনপি সমর্থক তিন আইনজীবী বুধবার সকালে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেন।

তাদের বক্তব্য শুনে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম মশিউর রহমান চৌধুরী বিকালে সমন জারির আদেশ দেন।

মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বেঞ্চ সহকারী নূর-ই-খোদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিচারক আগামী ২৩ অক্টোবর আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়- মন্ত্রী লতিফ একজন ‘ইসলামবিদ্বেষী’। ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ হজ সম্পর্কে তিনি ‘কুরুচিপূর্ণ দম্ভোক্তি’ করেছেন।

বাদীদের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, “পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারা অনুসারে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।”

সিলেটে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ

সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান খান।

তার জবানবন্দি শুনে মহানগর হাকিম শাহেদুল করিম সরকারের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

বাদীর আইনজীবী মো. সাইফুর রহমান বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করারও আবেদন করা হয়েছে।

বরিশালে আদেশ অপেক্ষমাণ

বরিশালের হাকিম আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগটি দায়ের করেছেন সাইফুল আলম ফুয়াদ নামের এক আইনজীবী।

সাইফুল আলম আদালতকে বলেন, মন্ত্রী লতিফ হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন।

হাকিম নূসরাত জাহান তার জবানবন্দি শুনে বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।