যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিলে তা বহাল না থাকার কারণ হিসেবে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেছে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।
Published : 17 Sep 2014, 06:06 PM
বুধবার আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া জানায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহকারী এই সংগঠনটি।
আপিল বিভাগের রায়ে হতাশা প্রকাশ করে কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ রায় জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের ভিত্তিতে আদালত তার রায় দিয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি জানান, এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
“এ বিচারের ক্ষেত্রে তথ্য উপস্থাপনের দুর্বলতা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। সঠিকভাবে তারা আমাদের সাহায্যও নেয়নি।”
তথ্য উপস্থাপনে দুর্বলতার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সরাসরি কিছু না বললেও মত জানিয়েছেন, প্রসিকিউশন টিমে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক মানের বিচারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি উপস্থাপনে সাক্ষী সুরক্ষাও নিশ্চিত করার আহ্বান জানান হাসান।
“একাত্তরে যারা একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা দ্বিতীয়বার সাক্ষ্য দিতে এসে সুরক্ষা পাচ্ছে না। তাদেরকে ব্যবহার করে এক শ্রেণি লাভবান হবে, আর সাক্ষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা হতে পারে না।”
“প্রয়োজনীয় দলিলাদি উপস্থাপনে দুর্বলতা, সাক্ষী সুরক্ষা না হওয়া ও আঁতাতের গুজবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের পারসেপশান তৈরি হয়েছে। যেটা কখনো ভালো নয়,” বলেন হাসান।
হতাশ আইসিএসএফ, ৪৯ ধারা সংশোধন দাবি
আপিলের রায়ে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)।
আইসিএসএফ সদস্য রায়হান রশিদ, আহমেদ জিয়াউদ্দিন ও এম সানজীব হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ আইসিএসএফ এই রায়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করছে। এই প্রেক্ষিতে আইসিএসএফ সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সংবিধানের ধারা-৪৯ সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে।”
৪৯ ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেওয়া যে কোনো দণ্ডের মার্জনা বা মওকুফ করার ক্ষমতা রাখেন।
যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর দণ্ড এড়ানোর সুযোগ বন্ধ করতে ‘রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না’ বলে শব্দগুলো যোগ করে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছে আইসিএসএফ।
সরকার পরিবর্তন হলে আমৃত্যু কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা অন্য কোনোভাবে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ হবে বলে মনে করেন কি না- এই প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “সমগ্র জনগণ যদি জাগ্রত থাকে, তারা যদি সব সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। তাহলে যে কোনো সরকারই আসুক না কেন, তারা এই রায়ের পরিপন্থি কোনো কাজ করতে পারবে বলে আমি মনে করি না।”