৪ সচিব, এক যুগ্ম-সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত

দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর চার সচিব ও এক যুগ্ম-সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 08:51 AM
Updated : 14 Sept 2014, 07:23 PM

রোববার রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লাল মুক্তিবার্তা এবং ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ছাড়া অন্যসব তালিকা স্থগিত করা হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রী।

সনদ বাতিল হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা হলেন- স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার।

তারা ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাম্প্রতিক এক তদন্তে বেরিয়ে আসে।

চার সচিব ও এক যুগ্ম-সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে দুদক।

মোজাম্মেল বলেন, “দুদকের তদন্তে পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধার সনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের সনদ নেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল।”

সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী, এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াও প্রতারণার মামলা হতে পারে।

নিয়মানুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখন এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এই সনদ ব্যবহার করে তারা যদি রাষ্ট্রের সম্পদ নিয়ে থাকেন তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

সনদ বাতিল হওয়াদের মধ্যে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান আপিল করতে পারবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সনদ নেওয়ার জন্য তিনি তিনটি শর্তের একটি পূরণ করেছেন।

অন্য চার কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেওয়ার বিষয়ে কোনো আবেদনই করেননি বলে জানান মোজাম্মেল।

সরকারের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা কর্মজীবনের শেষ সময়ে এসে চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়াতে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন বলে অভিযোগ। মাসুদ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেওয়ার সময় ওই মন্ত্রণালয়েরই সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিতে যোগদানের সময়ই মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখানোর কথা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৮২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে

লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতের কাছ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ তালিকার ১ লাখ ৪৪ হাজার ছাড়া বাকিদের সনদ স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এরা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাইয়ের পর আগামী ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলেও জানান মোজাম্মেল।