ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ‘নিবিড় যোগাযোগের’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।
Published : 12 Sep 2014, 10:52 AM
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে উদ্ধৃত করে তারা বলেছে, বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির প্রেক্ষাপটে কাজ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলটির একজন সাংসদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পৌঁছানো হয় জামায়াতের হাতে।
প্রথম পাতায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের নাম উঠে এসেছে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধনকারী হিসাবে।
যদিও ইমরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।
ইতোমধ্যে এসব অভিযোগের বিষয়ে নয়া দিল্লিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার পক্ষ থেকে নালিশ করা হয়েছে বলে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে, “২০১২-১৩ সালে ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নানা শাখা সংগঠনের হাতে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করার পরে বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিল মৌলবাদীরা। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে বকলমে আরও একটি মৌলবাদী সংগঠন গজিয়ে ওঠে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, সেই কাজে ইন্ধন জোগাতেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। যার একটা বড় অংশ সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার।”
ঢাকার অভিযোগের সত্যতা নয়া দিল্লি পেয়েছে, যার ভিত্তি ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালানও ভারত থেকে জামায়াতের হাতে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদীয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে। পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোতে পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষও ইডি-কে লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাছে টাকার বান্ডিল চালান যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া, হাওয়ালা ও হুন্ডির মাধ্যমেও গিয়েছে সারদার টাকা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগ্নিও করেছে সারদা। সেই অর্থও কার্যত জামায়াতের ‘জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে’ খরচ হয়েছে।
“পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম মহরম শুরু হয়। ২০১১-র ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়াত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে। সে সময়ে তৃণমূলকে অর্থেরও জোগান দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী।
“গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তী কালে জামায়াতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।”
বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখা উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন সিমি নেতা, বর্তমান তৃণমূল সাংসদ ইমরানকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আনন্দবাজারকে বলেন, “সিমি-কে নিষিদ্ধ করার সময়ে মমতা কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। তিনি সবই জানতেন। তার পরেও কেন তিনি ইমরানকে রাজ্যসভায় পাঠালেন?”
তার দাবি, জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই তৃণমূল নেত্রী এই প্রার্থী বাছাই করেছেন। মমতার এই কাজকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে মন্তব্য করে ওই বিজেপি নেতার অভিযোগ, এক জন মুখ্যমন্ত্রীর এমন কাজের জন্য রাজ্যে জঙ্গি ও দুষ্কৃতীরা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে।