বুধবার আসামিপক্ষের করা সময়ের আবেদনে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় ‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন দিন রাখেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ দুটি মামলায় আদালতে হাজিরা দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক হারুনুর রশিদ খান ওইদিন সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হলেও খালেদার সময়ের আবেদনে তা পিছিয়ে যায়।
উচ্চ আদালতে ‘লিভ টু আপিল’ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকার কথা বলে খালেদার আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করায় এ নিয়ে কয়েক দফা এ দুটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাল।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবং ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্টে দুনীর্তির অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিচার শুরু করে।
এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসাবে রয়েছেন।
মামলা বৃত্তান্ত
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। বাকি দুজন পলাতক।
গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে ‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তার বৈধতা ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান খালেদা।
সেখানে তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর বিষয়টি আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
এ দুই মামলা হওয়ার পর তা বাতিল চেয়েও হাই কোর্টে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর তা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।