তাণ্ডবের বিষয়ে সজাগ থাকুন: প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের ‘তাণ্ডবের’ বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2014, 07:24 AM
Updated : 24 August 2014, 04:53 AM

শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “বাংলাদেশে এভাবে বার বার হায়নার আঘাত আসবে। এভাবে রক্তাক্ত হবে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মাটি, আমরা তা চাই না।

“সকল দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে, এ ধরনের ঘটনা যেন বাংলার মাটিতে না ঘটে।”

যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং নির্বাচন ঠেকাতে গত বছরজুড়ে সহিংস আন্দোলন নিয়ে ‘বিএনপি-জামাতের তাণ্ডব : রক্তাক্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ফটোঅ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

এই ফটো অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান মঞ্চে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতার শিকার প্রায় অর্ধশতাধিক আক্রান্ত নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

মঞ্চের পেছনে দু’দিকে কোণাকুনিভাবে সিঁড়ির মতো তিনটি ধাপে অগ্নিদগ্ধ, সন্তানহারা অভিভাবক, স্বামীহারা বিধবা স্ত্রী এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহতরা বসেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চেই জ্ঞান হারান ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর রায়ের পর গাইবান্ধার বামনডাঙায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় নিহত কনস্টেবল হযরত আলীর স্ত্রী লায়লা খাতুন।

এছাড়া নিজেদের যন্ত্রণার কথা বলেন গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত মনিরের বাবা ভ্যানচালক রমজান আলী, হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র সমাবেশের দিন অগ্নিদগ্ধ কনস্টেবল পিয়ারুল ইসলাম, ফটিকছড়ির ভুজপুরে জামায়াত-শিবিরের হামলায় মারাত্মক আহত হেলালউদ্দিন পিয়ারু, অগ্নিদগ্ধ আইনজীবী খোদেজা নাসরিন, গাইবান্ধার কুন্তাইল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম এবং হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচির দিন বায়তুল মোকাররমে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুল করিম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের দেশের ৪১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২১টি মাদ্রাসা এবং নয়টি কলেজে হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনোটি পুরোপুরি এবং কোনোটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “রাজনীতি করতে হলে রাজনীতি করেন। কিন্তু, মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না। মানুষ হত্যা কোনো আন্দোলন না। এভাবে মানুষ হত্যা করে একটা পরিবারের এভাবে আর অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না।”

নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আমার ক্ষমতার কোনো মোহ নেই। ক্ষমতা আমার কাছে ভোগ-বিলাসের কোনো বস্তু নয়। এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।

“বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়। আমরাও চাই, মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক, স্বস্তিতে চলাফেরা করুক। আমরা এটুকুই চাই।”

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার সঙ্গে তাণ্ডবের তুলনা করে তিনি বলেন, “রক্তের ওপর পাড়া দিয়েই তারা ক্ষমতায় এসেছে।

“যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয় না, সে আন্দোলনে তারা লাশ দিয়ে চেষ্টা করেছে। আন্দোলনের নামে মানুষের জীবন নিয়ে, লাশ নিয়ে তারা খেলেছে।”

বিএনপি গণতন্ত্র, সংবিধান কিছুতে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তার সাড়ে ৮ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, “আজকে বক্তৃতা দেয়ার কোনো বিষয় না। এরকম হাজার হাজার ঘটনা সারা বাংলাদেশে ঘটেছে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

“শুধু একটাই প্রশ্ন আমার- এই স্বাধীন বাংলাদেশে আর কত রক্ত ঝরবে? আর,কত বোন বিধবা হবে? আর কত পিতা সন্তানহারা হবে? আর কত সন্তান পিতাহারা হবে?”

এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও রাশিয়া, চীন, কানাডা, ফিলিস্তিন, ভিয়েতনাম ও ভাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত এবং ভারত, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, ভুটান, লিবিয়া ও মিশরের দূতাবাসের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ক্ষমতায় এসে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলাম। তাহলে, এই বাধা কি জন্য? বারবার এই আঘাত কেন? কাকে খুশি করার জন্য? আমার সেই প্রশ্ন।”

আহত ও অগ্নিদগ্ধদের বর্ণনা শোনার পর বক্তৃতা দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারা... যারা দায়িত্ব পালন করছে- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী... তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের কথা?”

বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ১৭ জন পুলিশ, দুজন বিজিবি সদস্য এবং সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার দুজন সদস্য নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আর, শত শত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হল।”

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আহতদের সহযোগিতা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন সহযোগিতা করে যাব। কারণ, আমি জানি স্বজন হারানোর বেদনা কী? আমার থেকে আর তো কেউ বেশি জানে না। একদিনে তো আমি সব হারিয়েছি।”

এই পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “তারা যা হারিয়েছেন, হয়ত তা ফেরত দিতে পারব না। তাদের কাছে হয়ত একটা সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়াতে পারব। আর, চেষ্টা করব। এদের জীবনটা যেন চলতে পারে।

“আর, আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না। আর, এ ধরনের অবস্থা যেন বাংলাদেশে না ঘটে। সেটাই আমার আবেদন থাকবে দেশবাসীর প্রতি।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর বিএনপি-জামাতের মধ্যে কোনো বেশ-কম নাই।”
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার ওপর ১৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বক্তব্য রাখেন।