সাদমানের জামিন স্থগিতই থাকছে

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের আসামি সাদমান ইয়াসির মাহমুদের জামিনে স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 09:06 AM
Updated : 21 July 2014, 02:53 PM

রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার জামিন স্থগিতের আদেশ বহাল রাখে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সাদমানের পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। তাদেরকে সহযোগিতা করেন বিএম ইলিয়াস কচি।

পরে বিএম ইলিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, “আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাই কোর্টে রুল শুনানি করতে বলেছে। পাশাপাশি জামিনে চেম্বার বিচারপতির দেয়া স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অন্যতম কর্মী রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের সম্পূরক অভিযোগপত্রে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী সাদমান ইয়াসিরের (২০) নাম রয়েছে।

গত ১ জুন হাই কোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ তাকে ছয় মাসের জামিন দিলে তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান।

আপিল বিভাগে শুনানির এক পর্যায়ে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, এই মামলাটি নাঈমা হায়দার নেতৃত্বাধীন আদালতে শুনানির জন্য পাঠানো ঠিক হবে না। যে বেঞ্চ এ ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থাকার পরও জামিন দিতে পারে, যে বেঞ্চ নিয়মিত কার্যতালিকার বাইরে সম্পূরক কার্যতালিকা করে জামিন দিতে পারে; সেই বেঞ্চে এই ধরনের মামলা পাঠানো নিরাপদ নয়।

বিএম ইলিয়াস বলেন, “আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাই কোর্টে রুল শুনানি করতে বললেও কোনো বেঞ্চ ঠিক করে দেননি। তবে এই সময়ে হাই কোর্টের দেয়া জামিনে চেম্বার বিচারপতির দেয়া স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে।”

হাই কোর্ট জামিন দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১১ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ওই জামিন স্থগিত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে সাদমানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে সেই আদেশই বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। 

শাহবাগ আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মাথায় গত বছরের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের কালসীতে বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।

হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাড়ির সামনেই সাদমান (২০) ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

আহমেদ রাজীব হায়দার

অনলাইনে লেখালেখির মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের মুখোশ উন্মোচনে সক্রিয় থাকায় রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। রাজীব ‘থাবা বাবা’ নামে ব্লগে লিখতেন।

রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২ মার্চ নর্থ সাউথের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তারা হলেন- ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দীপ (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসান রেজা রুম্মান (২৩), নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজ (২২)।

তাদের মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে সাদমানকে ওই বছরের ১৪ অগাস্ট গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল।

গ্রেপ্তারের পর তার উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ বলেছিল, “সে (সাদমান) বলেছে, আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় ব্লগার রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে।”

হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ২৯ জানুয়ারি নর্থ-সাউথের সাত শিক্ষার্থী ও উগ্রপন্থি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।

অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামি হলেন নর্থ সাউথের সাবেক ছাত্র রেজওয়ানুল আজাদ রানা। পলাতক রানার বিরুদ্ধে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।