নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার ক্রমিক নম্বর জানতে না পারায় ভোট না দিয়েই কেন্দ্র থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে।
Published : 26 Jun 2014, 12:13 PM
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রে এমন অন্তত ২০ জনকে ভোট না দিয়েই ফিরে যেতে দেখা যায়।
রেখা সাহা নামে তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে এসেও ভোটার নম্বর না জানার কারণে ভোট দিতে পারিনি।”
লহ্মণ সাহা নামের আরেকজন বলেন, “তিন ঘণ্টা ধরে ভোট দেয়ার চেষ্টা করছি। কেন্দ্রের বাইরে কোন লোক আমাদের সহায়তার জন্য পাইনি। ভোটার ক্রমিক খুঁজে পাচ্ছি না। বাড়িতেও কেউ ভোটার স্লিপ দেয় নাই।”
ভোটার ক্রমিক নম্বর না পাওয়ার কারণেই অনেক ভোটার ভোট না দিয়েই ফিরে যাচ্ছেন বলে স্বীকার করেন কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। তবে এ ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই বলে জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইট ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ভোটারদের কেন্দ্র ও তাদের ভোটার নম্বর জানানোর ব্যবস্থা করে।
আগের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তথ্য সরবরাহ করলেও এবার তারা তা করেননি বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অনুযোগও করছেন অনেক ভোটার। তবে কেন্দ্র ফেরত ভোটারদের সামনে ‘অসহায়’ রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রের সামনেই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বাড়ি বাড়ি ভোটার স্লিপ পৌঁছানোর কথা প্রার্থীদের। ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের বাইরে প্রার্থীদের অনুমোদিত এজেন্টদেরও ভোটার নম্বর দেওয়ার কথা। এখন তারা না করলে আমরা কী করতে পারি?”
তবে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ও ওয়েবসাইটে ভোট তথ্য পাওয়া যাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা কয়েকজনকে জানান, যে কোনো মোবাইল থেকে আইডি লিখে স্পেস দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লিখে ২২৩৩ নম্বরে এসএমএস করলেই ভোটার ক্রমিক পেয়ে যাবেন।
সঙ্গে সঙ্গে শফিকুল ইসলাম নামে একজন ভোটার নিজের মোবাইল থেকে এসএমএস করে ফিরতি এসএমএসে পাওয়া ভোটার ক্রমিক নম্বর নিয়ে ভোট দিতে যান।
এদিকে সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে আসেন হাতে গোনা কিছু ভোটার।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, এ কেন্দ্রে ৩০৭৫ জন ভোটারের মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৬০ জন ভোট দিয়েছেন।
এখানকার অপর একটি কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তা আব্দুল কাউয়ুম জানান, তার কেন্দ্রে ৩৩১৭ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫৫জন ভোট দিয়েছেন।
গণবিদ্যা নিকেতনের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এএস এন মেসবাহ উদ্দিন বলেন, “ভোটার উপস্থিতি অনেক কম। দুই চার জন করে আসছেন।”
৩৮ নম্বর আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৯৮৭ জন। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।
ঘাড়মোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মেহেদি হাসান জানান, ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ৩৬২২ জন। সাতটি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। ঘণ্টায় গড়ে ৩০০টি করে ভোট পড়ছে।
ঘাড়মোড়া কেন্দ্রে ভোট দেওয়া ষাটোর্ধ্ব জিয়া হক ও মজিবর বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। আমাদের ভোট দিয়েছি। দেখি আল্লাহ কাকে পাশ করায়।”
রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট চলছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তবে প্রার্থীদের কাছ থেকে ছোটখাট অভিযোগ আসছে বলে জানান তিনি।
“আমার কাছে ছোটখাটো অভিযোগ আসছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয় সে নির্দেশনা রয়েছে,” বলেন তিনি।