সংসদে লটারি প্রথা বিলোপ চায় ইসি

সংসদ নির্বাচনে দুইয়ের বেশি প্রার্থী সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণার বিধান পাল্টে পুনর্ভোটের ব্যবস্থা করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2014, 10:58 AM
Updated : 19 June 2014, 10:58 AM

স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বিধিমালার সঙ্গে সমন্বয় রেখে এমন সংশোধনীর বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের উপ সচিব আবদুল অদুদ।

সম্প্রতি ৮২ তম কমিশন সভায় এ নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে জানিয়ে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনে লটারিতে ফল নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ইসির কমিশনার সভায় আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যমান আইনের আলোকে কমিশনের পরবর্তী সভার জন্যে কার্যপত্রও তৈরি করা হয়েছে।”

তিনি জানান, উপজেলা ও সংসদে লটারির বিধান রয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে পুনর্ভোটের বিধান রয়েছে।

“এখন সবকিছু পর্যালোচনা করে ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পরে আইন ও বিধান সংশোধনে উদ্যোগের নির্দেশনা পেলে আমরা কার্যক্রম শুরু করবো,” বলেন আবদুল অদুদ।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল একত্রীকরণের পর দেখা যায় যে, দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমসংখ্যক ভোট পেয়েছেন এবং তাদের কোনো একজনের জন্য একটি ভোট দেওয়া হলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার অধিকারী হবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সেই অবস্থায় অনুরুপ প্রার্থীদের নিয়ে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করবেন।

এতে বলা হয়, লটারি যে প্রার্থী অনুকূলে পড়বে, তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন বলে গণ্য হবেন। যা তাকে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হওয়া অধিকারী করবে। এক্ষেত্রে উপস্থিত সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের নির্বাচনী এজেন্টদের সামনে লটারি করতে হবে।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এমন নিদের্শনা দেয়া হয়।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ৪৩ বিধিতেও বলা হয়েছে, দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুকূলে সমান সংখ্যক ভোট পড়লে রিটার্নিং কর্মকর্তা যেরূপ উপযুক্ত মনে করেন সে পদ্ধতিতে অবিলম্বে লটারির ব্যবস্থা করবেন।

লটারির ফল যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে যায় তিনি সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পেয়েছেন বলে গণ্য হবে। তাকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হবে।

পরবর্তী সভার কার্যপত্রে বিধান সংশোধনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সমভোট প্রাপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পুনর্ভোট করা হয়, সেহেতু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও একই ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

এজন্যে আগের বিধানের পরিবর্তে ‘কমিশন সমভোট প্রাপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পুনর্ভোটের ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবে’ শব্দগুলো সংযোজন করবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে যেহেতু সমভোট প্রাপ্তদের পুনর্ভোট নেয়া হয়, সেহেতু সংসদ নির্বাচনেও এই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এলক্ষ্যে আরপিও’র ৩৮ অনুচ্ছেদে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।

ইসির অনুমোদন পেলে সিদ্ধান্তটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে তা পাঠানো হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, “সংসদ নির্বাচনে কখনো সমভোট পাওয়ার নজির নেই। এ নিয়ে কোনো ঝামেলাও তৈরি হয় নি। তবে পুনর্ভোটের ব্যবস্থা হলে ইসির ফের নির্বাচনী খরচের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে করতে হবে।

“বিদ্যমান আইনের সংশোধন আনতে হবে কি না বা আদৌ পুনর্ভোটের যৌক্তিকতা রয়েছে কি না তা পর্যালোচনা করার অবকাশ রয়েছে।”