তবে এনিয়ে কখনো সোচ্চার ভূমিকায় যে তাকে দেখা যায়নি , তা বলছেন তার দল বিএনপির নেতারাই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মপক্ষ সমর্থনে মঞ্জুরের বক্তব্যকে দেখছেন অজুহাত হিসেবে।
২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে নিজের রাজনৈতিক গুরু ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়েছিলেন মঞ্জুর।
নির্বাচনের আগে দেয়া মঞ্জুরের ৫৬ দফার ইশতেহারে প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন।
চার বছর পর জলাবদ্ধতাকে ‘জলজটে’ পরিণত করার সাফল্য দাবি করলেও পুরো সমস্যা নিরসন মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব নয় বলে স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়র মঞ্জুর। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় সরকারি বরাদ্দ এখনো পাননি বলে দাবি তার।
এখন পর্যন্ত ৫৬ দফার কয়টি পূরণ করেছেন, তাও জানাতে পারেননি মেয়র। আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী মাসে দায়িত্ব নেয়ার চার বছর পূর্তিতে অগ্রগতি লিখিতভাবে জানাবেন।
“কী করেছি তা জনগণ বিচার করবে। আগামী মাসে দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তিতে লিখিতভাবে সবাইকে জানাব।”
প্রতিশ্রুতি পূরণে বাধা সরকারি ‘অসহযোগিতা’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মঞ্জুর আলম এর আগে তিনবার আওয়ামী লীগের সমর্থনেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কখনোই সক্রিয় দেখা যায়নি তাকে।
বরাদ্দ না পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বললেও সরকারের বিরুদ্ধে এখনো এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি বিএনপির এই নেতা।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেন অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে একমত হলেও পাশাপাশি এ নিয়ে মঞ্জুরের প্রতিবাদী ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন।
শাহদাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে সরকার গত চার বছরে বরাদ্দ দিয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। আর চসিক বরাদ্দ পেয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এটা বিমাতাসুলভ আচরণ।
“এডিপিতে হাজার হাজার কোটি টাকা থাকে। চট্টগ্রাম নগরীতে একটি খাল খননে ২৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চার বছরেও পায়নি চসিক।”
শাহাদাত বলেন, “মেয়র ভদ্রলোক। কিন্তু জনস্বার্থে প্রতিবাদী হতে হবে। উনি যথেষ্ট প্রতিবাদী নন,” মন্তব্য এই বিএনপি নেতার।
তিনি আরো বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছেন- তিনি চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিয়েছেন। মেয়র রাস্তায় নামলে টাকা পাবেনই।”
অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মঞ্জুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাইনি। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে হয়ত দুই হাজার কোটি টাকা লাগবে।
“এবছর যদি বরাদ্দ পাই তবে খালটির কাজ শুরু করে দিতে পারব। আগে দুই-চার দিনের জলাবব্ধতা হত এখন দুই-চার ঘণ্টার জলজট হয়।”
‘ব্যর্থতা ঢাকতে অজুহাত’
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করা দূরে থাক জলাবদ্ধতা এখন আরো বেড়েছে।
“সঙ্গে যোগ হয়েছে মশার উপদ্রব, মোড়ে মোড়ে আর্বজনা ও অপরিকল্পিত খোঁড়াখুড়ি। একসময়ের নান্দনিক চট্টগ্রাম এখন ক্ষয়িষ্ণু শহরে পরিণত হয়েছে।”
সরকারি বরাদ্দের স্বল্পতার বিষয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, অঙ্গীকার করার সময় তো তিনি বলেননি যে সরকার সহযোগিতা করলে প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। না হলে করব না।”
“এখন এসব বলা, ব্যর্থতা ঢাকার খোঁড়া অজুহাত মাত্র। সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নিতে হয়। উদ্যোগ নিতে হয়। সঠিক পরিকল্পনা, সদিচ্ছা, একাগ্রতা ও অনমনীয় মনোভাব থাকলে সফল পরিবর্তন সম্ভব।”
মঞ্জুরের নেতৃত্বের বিষয়ে প্রায় কাছাকাছি মত বিএনপি নেতা শাহাদাতেরও।
তিনি বলেন, “মেয়র উদ্যমী, বহুমাত্রিক ও শক্তিশালী হয়ে সততার সাথে উদ্যোগ নিলে আগামী এক বছরেই বর্তমান অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেয়র দলীয় নেতাদের পরামর্শ নেন কি না- জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, “চসিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দাওয়াত দেন। গিয়ে পরামর্শ দিই।
“তবে তিনি নগর উন্নয়নবিদদের নিয়ে কাজ করলে ভালো হত। বন্ধ আয় বর্ধক প্রকল্পগুলোও চালু করতে হবে।”