অনলাইনে পরিচয় নিবন্ধনের সুযোগ আসছে

অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র পূরণ করেই নাগরিকের পরিচয় নিবন্ধন করার সুযোগ রেখে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2014, 04:00 PM
Updated : 18 Jan 2015, 10:51 AM

আর নিবন্ধনের পরে আবেদনকারীকে প্রথম দফায় বিনা পয়সায় ডিজিটাল পদ্ধতির ‘স্মার্ট’ জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হলেও, নির্ধারিত মেয়াদ শেষে নবায়ন করতে আড়াইশ’ টাকা ফি’র দিতে হবে বলে প্রস্তাব রাখা হয়েছে নীতিমালায়।

ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিধিমালা ও প্রবিধানমালা’র  খসড়া করে ভেটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনার জন্য তা ইসিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

“ফি নির্ধারণের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকে সবকিছু ঠিক করে এ মাসেই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে।”

বর্তমান ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন’-এর আলোকে নির্ধারিত ফি নির্ধারণে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রবিধানমালা, ২০১৪’-এর খসড়াটি তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। আইনমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই সংশোধিত এ বিধান চালু হবে।

এ দুই বিধিমালা দ্রুত প্রণয়নে সার্বিক বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবের সঙ্গে গতমাসে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক আলোচনাও করেছেন।

৫ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে ‘স্মার্ট’ জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়াসহ নয়টি কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

বর্তমানে ভোটারদের ‘লেমিনেটেড পরিচয়পত্র’ দেয়া হয়, যার মেয়াদ ১৫ বছর। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আগামীতে আধুনিক প্রযুক্তির টেকসই ‘স্মার্টকার্ড’ নামে জাতীয় পরিচয়পত্র বিনামূল্যে বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

কেবল ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নাগরিকরাই  ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ পেয়ে থাকেন। ভোটার তালিকাভুক্ত নন, এমন নাগরিকের পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ারও বিধানও নতুন নীতিমালায় যুক্ত করেছে ইসি।

ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবিত বিধিতে বলা হয়েছে, “ভোটার হবার যোগ্য কোন নাগরিক ‘ভোটার তালিকা আইন’ অনুসারে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলে তাকে নিবন্ধনের জন্য  কমিশন বা স্থানীয় কার্যালয়ে সরাসরি অথবা কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনপত্রের নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে।”

বিধি বলা হয়, অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর বা ইমেইল ঠিকানায় অথবা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনীয় প্রমাণ সাপেক্ষে আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক ফিচার নেওয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নের ক্ষেত্রেও অনলাইনে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র প্রথমবার বিনামূল্যে সংগ্রহ করা গেলেও পরবর্তীতে নবায়ন ও হারানোর বিষয়ে ফি প্রস্তাব করেছে ইসি।

দুইটি ক্ষেত্রেই ‘জরুরিভাবে’ পরিচয়পত্র সংগ্রহে ‘সাধারণ’-এর দ্বিগুণ ফি প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিধিতে বলা হয়েছে, নবায়নে সাধারণ ফি ধরা হয়েছে আড়াইশ’ টাকা। যা আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়া সম্ভব হবে। তবে জরুরি ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ফি অর্থাৎ ৫শ’ টাকা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তা নবায়ন করা যাবে।

হারানো বা নষ্ট হলে পরিচয়পত্র পেতে প্রথমবার আবেদনে ৫শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, দ্বিতীয়বার আবেদনের এক হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া পরবর্তী যে কোনোবার আবেদন করতে সাধারণ সময়ে দুই হাজার টাকা ও জরুরি  সময়ে চার হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ইসি সচিব বরাবর পে অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে তা পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে বিধিমালায়।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলনাতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, “স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়াটি আমরা দ্রুত শুরু করতে চাই। এ লক্ষ্যে আইনী বিধান সংশোধন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় ‌কার্যাদেশ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

“এ বছরের শেষে সম্ভব না হলেও আগামী বছরের শুরুতেই স্মার্টকার্ড মানুষের হাতে দেয়া শুরু হবে আশা করি।”

তালিকাভুক্ত ভোটের সংখ্যা ৯ কোটি ২০ লাখেরও বেশি। এ বছর হালনাগাদ শেষে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন।