বাঁধে হালদায় বাড়ছে লবণ, কমছে মাছের ডিম

উজানে দুটি বাঁধের কারণে নিজস্বতা হারানোর পথে দক্ষিণ এশিয়ায় রুই জাতীয় মাছের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2014, 12:31 PM
Updated : 7 June 2014, 12:31 PM

বাঁধের কারণে নদীতে পানি প্রবাহ কমে লবণাক্ততা বাড়ছে, যাতে মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণও কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হালদা নদী ফটিকছড়ি উপজেলার উত্তরপূর্ব প্রান্ত দিয়ে চট্টগ্রামে ঢুকেছে।

উপজেলার ভুজপুরে ডলু কৈয়াছড়া-আছিয়া চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় নদীর উজানে ২০১১ সালে ১৪ কোটি টাকায় তৈরি হয় একটি রাবার ড্যাম, যার মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাচ্ছে ১০ হাজার একর কৃষি জমি।  

২০১২ সালে ভুজপুরে নদীর সঙ্গে যুক্ত হারুয়ালছড়ি খালে আট কোটি ৩৩ লাখ টাকায় তৈরি হয় আরেকটি রাবার ড্যাম। এতে হারুয়ালছড়ির দেড় হাজার একর জমি সেচের আওতায় এসেছে।

এ দুটি বাঁধের ভাটিতে হালদা নদীতে রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার দুটো পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট।

মোহরা পানি শোধনাগার প্ল্যান্টের পরে হালদা ও কর্ণফুলীর মোহনা মদুনাঘাটে রয়েছে দ্বিতীয় প্ল্যান্ট।

হালদায় পানি কমে যাওয়ায় মোহরা পানি শোধনাগার হুমকির মুখে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ প্রকল্পে প্রতিদিন হালদা নদীর ৯০ মিলিয়ন লিটার পানি শোধন করা হয় বলে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এ প্রকল্পের পানির ওপর নগরীর ৭০ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।

“কিন্তু দুটি বাঁধ হওয়ার পর নদীর উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় জোয়ারের সময় মোহনা দিয়ে কর্ণফুলী থেকে লবণ পানি হালদায় ঢুকে পড়ছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম ওয়াসার  এক রসায়নবিদ জানান, হালদার পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা ৬০০ পার্টস পার মিলিয়ন। কিন্তু গত নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে প্রায় তিনগুণ বেশি লবণাক্ততা পাওয়া গেছে।

নদীর পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূলে থাকতে হয় জানিয়ে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, লবণাক্ততাসহ অন্য পারিপার্শ্বিক উপাদানে ব্যতিক্রম ঘটলে ডিম ছাড়া ব্যাহত হয়।

গত দুই বছরে মা মাছের ডিম ছাড়া থেকে তার প্রমাণও পাওয়া যায়।

চলতি বছর ১২ মে বজ্রসহ বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।জেলেদের সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫০০ কেজি। গত বছর ডিম সংগ্রহ হয়েছিল ১৫ হাজার কেজির মত।

অথচ উজানে বাঁধ দেয়ার আগে ২০১১ সালে এখানে ২০ হাজার কেজির মত ডিম পাওয়া গেছে বলে হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া জানান।

‘হালদা প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ পরিচালক চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতি দেব বলেন, সাধারণ মা মাছ এক মৌসুমে দুইবার ডিম ছাড়ে। তবে চলতি ও গত বছর মাত্র একবার ডিম ছেড়েছে।

“২০১১ সালের শুরুতে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডিম ছাড়ার মৌসুমে নদীতে ৫০০ কিউসেক পানি প্রবাহ ছিল। এখন বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ শুষ্ক মৌসুমে কম থাকে।”

নদীর পানি প্রবাহ দেখতে মাস খানেকের মধ্যে আবার সমীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।

মা মাছ শিকার  

হালদায় মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও অবাধেই এ কাজ চলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাতের আঁধারে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ শিকার হয় বলে স্থানীয়রা বলেছেন।

বিক্রয় নিষিদ্ধ এসব মাছ চলে যায় নগরীর বড় কাঁচা বাজারগুলোতে। গত সপ্তাহে নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে এরকম দুটি মা মাছ বিক্রির সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

হালদা থেকে মা মাছ ধরার কথা স্বীকার করেছেন মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতি দেবও।

“মা মাছ ধরা হয় কাপ্তাই বাঁধ সংলগ্ন অংশ থেকে। সেটা আমার প্রকল্পের আওতায় নেই। ওই অংশও যাতে প্রকল্পের অধিভুক্ত করা যায় সেটা আগামীতে চেষ্টা করব,” বলেছেন তিনি।