স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টি উপক্ষো করেই শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারের বেদীতে বসেন তিনি।
এ সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে যোগ দেন জাফর ইকবালের সঙ্গে, ছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও।
শুক্রবারের কর্মসূচি শেষ করার পরে জাফর ইকবালের পাশে দাঁড়িয়ে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ফেইসবুকভিত্তিক একটি সংগঠনের কর্মী নাজিউর রহমান বলেন, আগামী শুক্রবার সকাল ৯টায় শহীদ মিনারে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
অধ্যাপক জাফর ইকবালও এতে যোগ দেবেন বলে জানান তিনি।
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী সাত দিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গণসংযোগ করা হবে বলেও জানান নাজিউর।
সম্প্রতি কয়েকটি নিবন্ধে এইচএসসির কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনে তার পক্ষে ‘প্রমাণ’ তুলে ধরেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে চারটি নিবন্ধ লেখেন তিনি।
তবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, গত ১০ এপ্রিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ওই পরীক্ষা স্থগিত করার পর থেকে নির্ধারিত দিন সকালে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন তারা।
নিজেও নিবন্ধ লিখে জাফর ইকবালের লেখার জবাব দেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করার পর গত ২৩ মে অনশনে বসার ঘোষণা দেন অধ্যাপক জাফর।
“আমি শহীদ মিনার কিংবা এ রকম কোনো একটা জায়গায় খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে থাকব। হাতে একটা প্ল্যাকার্ড রাখব। সেখানে লিখব- প্রশ্ন ফাঁস মানি না, মানব না। আমাদের ছেলে-মেয়েদের অসৎ হতে দেব না,” বলেন তিনি।
ঘোষণা অনুযায়ী অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর জাফর ইকবাল বলেন, “একাই বসে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে দেখে বুকটা ভরে গেছে।”
প্রশ্ন ‘ফাঁস’ হওয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় বিপর্য়ের মুখে পড়েছে বলেও দাবি করেন এই অধ্যাপক।
উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।”
সকালে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জাফর ইকবাল বলেন, “প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বহু দাবি করেছি, আমার দাবি কে শোনে?
“আমার দেশে এটা হবে তা কেমন করে মানা যায়? মানুষ জানে এটা অন্যায় তাই প্রতিবাদ করছি।”
এই ঘটনার প্রতিবাদ না করলে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“আমি প্রশ্ন ফাঁস হতে দেব না- এমন ইচ্ছে থাকলেই প্রশ্ন ফাঁস হবে না,” বলেন জাফর ইকবাল।
এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গৃহিণী রেবেকা পারভীন তুহিন অভিযোগ করেন, প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, লেখক আনিসুল হক, আহসান হাবীবও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
‘প্রশ্নপত্র ফাঁস: মানি না মানব না’ শীর্ষক ফেইসবুক গ্রুপের সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসির তত্ত্বীয় বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৫ জুন। তবে স্থগিত ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ৮ জুন নেয়ার সিদ্ধান্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে তিনদিন পর এ পরীক্ষা শেষ হবে।
এছাড়া ৭ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষার সূচি নির্ধারিত রয়েছে।