সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা রানাও রিমান্ডে

গ্রেপ্তার র‌্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা এম এম রানাকেও সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করবে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2014, 11:22 AM
Updated : 18 May 2014, 03:35 PM

শনিবার রাতে গ্রেপ্তার নৌবাহিনীর চাকরিচ্যুত এই কর্মকর্তাকে রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদালতে তোলা হয়। আগের দিনের মতোই জনতা ও আইনজীবীরা তার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়, জুতা ছুড়ে মারা হয় তার দিকে।

আগে গ্রেপ্তার র‌্যাবের দুই কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও আরিফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন সময় পেলেও রানাকে সাত দিন ধরে হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।

র‌্যাব-১১ এ  নারায়ণগঞ্জ  শহরের পুরাতন কোর্ট ক্যাম্পের অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রানা। সেখানেই সাতজনকে হত্যা করা হয় বলে নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলামের দাবি।

শহীদুল আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “ক্যাম্প অফিসেই ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাই পুরাতন কোর্টে তল্লাশি চালালে  হত্যাকাণ্ডের অনেক আলামত পাওয়া যেতে পারে।”

সিদ্ধিরগঞ্জে পাওয়ার স্টেশনে ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন তারেক সাঈদ, আরিফ ও রানা।

শহীদুল বলেন, “এই ফ্ল্যাটে বসেই নানা রকম অপকর্ম করত তারা। তাদের ওই ফ্ল্যাটগুলোতে তল্লাশি চালানো হলে অবৈধ টাকা ও অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যেতে পারে।”

র‌্যাবের কর্মকর্তা পুলিশের এএসপি রবিউলও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাই তাকেও আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান তিনি।

তবে দুই সহকর্মীর মতো রানাও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ফতুল্লা থানার যে এলাকা থেকে সাতজন অপহৃত হয়েছিল, তা তার আওতাধীন ছিল না।

“তাই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই,” বলেন রানা।

এদিকে তারেক সাঈদ ও আরিফকে হত্যা মামলায় আটক  না দেখিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানোয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে আদালত।  চার দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।  

অন্যদিকে সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী আটক রাখার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছে বনবিভাগ।

তার গাড়ির চালক মহিবুল্লাহকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। নূর হোসেনের কথিত বান্ধবী মহিলা কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে আদালতে রানা

ঢাকা সেনানিবাস থেকে রাতে গ্রেপ্তারের পর রানাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ লাইনে এনে রাখা হয়।তারেক সাঈদ ও আরিফকেও সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

রানাকে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং হাতে কড়া পরিয়ে বিকাল ৫টার দিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাকিম কেএম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়।

রানাকে আদালতে আনার পর আইনজীবী ও ক্ষুব্ধ জনতা ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে, যা রিমান্ডের শুনানির সময়ও চলছিল।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশীদ কাউন্সিলর নজরুল ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রানাকে ১০ দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন আদালতে বলেন, “আইনের রক্ষক হয়ে রানাসহ র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা পেশাদার খুনির মতো ভাড়ায় ৭ জনকে খুন করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়।

“কুমিল্লা, লাকসাম, লক্ষ্মীপুরের যত অপহরণ, গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেছে সব ঘটনাই তারা ঘটিয়েছে। সাতজনের লাশের সঙ্গে যে ইট, রশি ও বস্তা পাওয়া গেছে, তাও র‌্যাবের ব্যবহৃত।”

শুনানি শেষে বিচারক সাতদিন জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

আদালত থেকে পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায় রানা বের হওয়ার সময় জনতার বিক্ষোভের মধ্য থেকে কয়েকটি জুতাও ছোড়া হয়। কেউ কেউ আঘাত করার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

চন্দন সরকারসহ সাতজনকে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আইনজীবীরা আগের মতোই সকালে এক ঘণ্টা আদালত বর্জনের পর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে।

র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে হত্যামামলায় গ্রেপ্তার না দেখানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইনজীবী নেতারা।