লোড শেডিংয়ে ব্যাহত বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন

ফেনীর সোনাগাজীতে স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হলেও এবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পল্লী বিদ্যুতের লোড শেডিং।

নাজমুল হক শামীমফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2014, 02:27 PM
Updated : 9 May 2014, 02:27 PM

সাত বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হয়।

ফেনী বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে থাকা প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমানে পিডিবির প্রজেক্টের আওয়তায় প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে চারটি টারবাইন দিয়ে বাতাস কাজে লাগিয়ে পয়েন্ট ৯ (০.৯) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উৎপাদিত বিদ্যুত ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে দেয়ার ব্যবস্থা করলেও ঘন ঘন লোড শেডিং এর কারণে লক্ষ্যমাত্রার ২০-২৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না।

তিনি বলেন, প্রবল বাতাস শুরু হলে পল্লী বিদুতের লাইনে বিদ্যুৎ থাকে না। আবার বাতাস বন্ধ হলে লাইনে বিদ্যুৎ আসে। এই টারবাইনগুলো চালানোর জন্য আলাদ একটা বিদ্যুতের লাইন দরকার।

ওই লাইন দিয়ে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ দিলে পাখা ঘুরবে আর পাখা ঘুরলে বাতাস কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদিত হবে।

ইকবাল হোসেন বলেন, তবে, চালুর পর এ পর্যন্ত (৫ মে ২০১৩) ৫১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে। লোড শেডিং কমানো গেলে ভালো বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, যা জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করতে পারে।

ফেনী ও কুতুবদিয়া বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক ফজলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বায়ু বিদ্যুতের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এর কারণ হচ্ছে নতুন কোনো কিছু গ্রহণ করতে সরকারের অনেক সময় লাগছে।

যে বিতরণ লাইন দিয়ে এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে গত মার্চ মাসে সেটিতে বিভ্রাট হয়েছে ১৩৮ বার।

তবে, আশার কথা হলো এ অবস্থায় কুতুবদিয়ায় দেশের দ্বিতীয় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমানে মেরামত করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

লোড শেডিংয়ের বিষয়টি নিয়ে ফেনী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিকের বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটি পিডিবির প্রজেক্ট। পল্লী বিদ্যুৎ যতটুকু বিদ্যুৎ পায়, তা ব্যবহার করে তার বিল পিডিবিকে পরিশোধ করে।

পিডিবির তত্বাবধানে থাকা বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকতার অনুমতি না থাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাফর আহম্মেদ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রকল্পের তথ্য

ফেনী বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, ফেনীর মহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ছয় একর জমির উপর স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০০৫ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হয়।

এ বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪টি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হতো। এটি চালানোর জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হওয়ায় তৎকালীন স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে একটি ১১/০.৪ কেভি লাইনের সংযোগ নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানির জন্য স্থাপন করা হয় টু ওয়ে মিটার।

২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও ২০০৬ সালের শুরুতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরপর থেকে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১১ কেভি লাইনে যুক্ত হয় উৎপাদিত বিদ্যুৎ।

চালুর পর দুই বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, এরপর ২০০৭ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি।

এতদিন বন্ধ থাকা অবস্থায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০ মিটার উঁচু টারবাইন টাওয়ার ও তার মাথায় স্থাপিত প্রায় দেড় টন ওজনের এক একটি পাখা ছাড়া সবকিছুই চুরি হয়ে যায়।

ভারত থেকে সরবরাহকৃত ৫০ মিটার টাওয়ারের কোটি কোটি টাকার জেনারেটর, কন্ট্রোল প্যানেল, সাব স্টেশন, ব্লেড, মেচিং গিয়ার ইলিমেন্টসহ প্রায় সব যন্ত্রপাতি ওই সময়ে অযত্ন ও অবহেলায় নষ্ট ও চুরি হয়ে যায়।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সাধারণের নাগালের বাইরে রাখার জন্য কোনো সীমানা প্রাচীর বা প্রতিন্ধকতাও নেই।