‘সংকটের সমাধান নয়, শ্রমিকদের ঝুঁকিতে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র’

বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক শিল্পের মূল সমস্যা সমাধান না করে শ্রমিকদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2014, 03:01 PM
Updated : 25 April 2014, 09:37 PM

শুক্রবার ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘রুমি ফোরাম’ আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের পোশাক খাতে কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব না দিয়ে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের উন্নয়নে মার্কিন কংগ্রেসের ধারাবাহিক তৎপরতারও সমালোচনা করেন রাষ্ট্রদূত।  

তবে রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের পর বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় নতুন নতুন ভাবনা তুলে ধরে এ খাতের উন্নয়নে ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা’ নিয়ে এগিয়ে আসায় ক্রেতাদের প্রশংসা করেন তিনি।      

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক উপ-সহকারীমন্ত্রী আলিসা আয়ার্স ওই আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত কাদের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেন। তবে তার বক্তব্যের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল তৈরি পোশাক শিল্প। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।   

গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৫ জন নিহত হওয়ার পর জুলাইয়ে পোশাক কারখানার কর্ম পরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা না পেলেও ওই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা ছড়ায়।

কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় উন্নয়ন হলে জিসএপি ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে মার্কিন প্রশাসন বলেছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত উল্টো শ্রমিকদেরই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে-মন্তব্য করে আকরামুল কাদের বলেন, “তখনো রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করছিল বাংলাদেশের পোশাক শিল্প।

“কিন্তু সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত ভয়াবহ ওই দুই ঘটনার জন্য দায়ী বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়ায় সহায়তা করেনি, বরং বিপুল কর্মশক্তিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।”

সে সময় বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশংসা করেন তিনি।

বাংলাদেশের ‘এই কঠিন সময়ে’ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত কাদের।

এক প্রশ্নের জবাবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা  ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি।

কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে শুধু কম দামে পোশাকই পান না, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সুযোগ করে দেয়।

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ উচ্চ হারে শুল্ক (৮ থেকে ৩২ শতাংশ) দিয়েই বাংলাদেশের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে এবং তা থেকে প্রায় ৮২০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক এসেছে।

“দুঃজনক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে ধারাবাহিকভাবে কথা বললেও বাংলাদেশের পোশাকে শুল্ক ছাড়ের ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ থেকেছে।”

“মার্কিন কংগ্রেসের কি শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বা কর ছাড়ের প্রস্তাব দেয়া উচিত নয়? নিঃসন্দেহে তা এই শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও  অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানের সুযোগ করে দেবে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আকরামুল কাদের বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ‘বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতার’ প্রমাণ দিয়েছে।

‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা  এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে শক্তিশালী’ করতে দশম সংসদ নির্বাচন হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।